নগরীতে হোটেলকক্ষে ঢুকে মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে বিভাগীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ভারপ্রাপুলিশ কমিশনার এস এম ফজলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
জাহাঙ্গীর ছিলেন নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই।
পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান জানান, ধর্ষণের অভিযোগে ডিবির এসআই জাহাঙ্গীরকে বুধবার রাতে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) থেকে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে।
ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারী খুলনা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চেকআপ করিয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক অঞ্জন জানান, বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টায় ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তার শরীর ও পোষাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাকে মানসিক কাউন্সিল দেয়া হয়। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে। প্রতিবেদন আসতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগতে পারে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ শাহজাহান জানান, ওই নারী মোংলায় নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।
খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর মেয়েকে বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এস আই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে খালিশপুর জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
আদালতের অনুমতি নিয়ে এস আই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেয়া হবে।
হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, এস আই জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে এই হোটেলে আসতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে মা-মেয়ে যে কক্ষে ছিলেন ওই কক্ষের দরজায় গিয়ে নক করেন। তারা দরজা খুলে দেয়ার পর তাকে (হোটেল কর্মচারীকে) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি দেখেননি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন হোটেলের নিচতলার মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
হোটেলের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন সজল জানান, তিনি রাতে বাসায় ছিলেন। রাত ২টার দিকে মোবাইলে ঘটনা শুনে হোটেলে আসেন। এসে দেখেন এস আই জাহাঙ্গীরকে হোটেলের রিসিভশনে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
নগরীর লোয়ার যশোর রোডের সুন্দরবন হোটেল থেকে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ভোররাতে এসআই জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়। পরে খুলনা থানায় হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এজাহারের বরাতে খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, মোংলার এক নারী তার ১১ বছরের মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীতে আসেন। সঙ্গে ছিলেন ওই নারীর ভাগনেও। ডাক্তারের সিরিয়াল না পেয়ে তারা রাতে থাকার জন্য সুন্দরবন হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া নেন। একটি কক্ষে ছিলেন মা-মেয়ে, আরেকটিতে ভাগনে।
রাত সোয়া ২টার দিকে এসআই জাহাঙ্গীর ওই নারীর কক্ষের দরজা ধাক্কা দিতে থাকেন। পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিনি দরজা খুলতে বলেন। ওই নারী দরজা খুলে দিলে জাহাঙ্গীর ভেতরে ঢুকে মেয়ের সামনেই তাকে ধর্ষণ করেন। তাদের চিৎকারে ওই নারীর ভাগনে ও হোটেলের কর্মচারীরা মালিককে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ গিয়ে জাহাঙ্গীরকে আটক করে।
ওই নারীই পরে খুলনা থানায় ধর্ষণের মামলা করেন বলে জানান ওসি।