বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে খুলনায় স্মরণকালের বৃহত্তম র্যালী করেছে বিএনপি। সুবর্ণ জয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে দলটির নেতাকর্মীরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক, রণাঙ্গণের অমর মহানায়ক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে। বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অন্তত দশ সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী র্যালীতে অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালীটি শুরু হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণের পর রয়্যাল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় রাস্তার দুধারে হাজার হাজার মানুষ করতালি দিয়ে ও বিএনপির মিছিলের শ্লোগানের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে স্বাগত জানায়। প্রায় এক ঘন্টা সময় স্থবির হয়ে পড়ে মহানগরী খুলনার প্রাণকেন্দ্রের সড়ক মহাসড়ক সমূহ।
খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর খুলনার রাজপথে এটিই প্রথম বৃহত্তর কর্মসূচি। যে র্যালীর অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ঊর্ধ্বে তুলে শ্লোগানে কন্ঠ মিলিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আলহাজ রকিবুল ইসলাম বকুল। মিছিলের পথ পাড়ি দেওয়ার সময় হাত নেড়ে রাস্তার দুপাশে অবস্থান নেওয়া পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সালামের প্রত্তুত্তোর দেন খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের এই প্রার্থী।
দুপুরের পর থেকেই সমগ্র খুলনা যেন পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। একের পর এক মিছিল এসে জমায়েত হতে থাকে কে ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সময়ের ব্যবধানে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় জমায়েতস্থল। এরপর নেতাকর্মীরা বাধ্য হন আশেপাশের সড়কে অবস্থান নিতে। মহানগর ও জেলা বিএনপি ছাড়াও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মিছিলের পাশাপাশি লাল-সবুজ শাড়ি পরিহিত মহিলা দলের শতাধিক কর্মীর মুখরিত শ্লোগান বিজয় দিবসের র্যালীতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। বৃহত্তম এ মিছিলটি শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও ইতিহাসে নজিরবিহীন হিসেবে স্থান করে নেয়।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. এস এম শফিকুল আলম মনা। বক্তব্য রাখেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা,সাবেক এমপি অধ্যাপক ডা. গাজী আব্দুল হক, জেলা বিএনপির আহবায়ক আমির এজাজ খান, বিএনপি নেতা ফখরুল আলম, নগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী ও নগর যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহির। এ সময় মঞ্চে অবস্থান নেন জননন্দিত নেতা তারুণ্যের প্রতীক আলহাজ রকিবুল ইসলাম বকুল।
সভাপতির বক্তব্যে শফিকুল আলম মনা বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে রাজনীতিবীদরা যখন ব্যর্থ হয়েছিলেন তখন মেজর জিয়াউর রহমান অমিত দেশপ্রেমকে বুকে ধারণ করে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগ নেতারা যখন পলায়নপর সে সময় জিয়াউর রহমান নিজে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন, জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। কারণ তাদের যেখানে ব্যর্থতা, সেখানেই জিয়া পরিবারের সফলতা। এজন্য অযোগ্য, ব্যর্থ, লুটেরা, ভোট ডাকাতির সরকার জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। তারা তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের সংগ্রামের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো পাতানো মামলায় বন্দি রেখে হত্যা করতে চায়। তিনি বলেন, আমাদের দাবি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সারা দেশের লাখ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিুরদ্ধে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
বিকেল ৪টায় সমাবেশ শেষে র্যালী বের হয়। র্যালীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশালাকৃতির পোট্রেট বহন করা হয়। নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল ছোট ছোট কাঠির আগায় বাঁধা জাতীয় ও দলীয় পতাকা। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বহন করা হয় বর্ণিল প্লাকার্ড। অনেকের মাথায় ছিল লাল সবুজের ফেটি বাঁধা। সমগ্র মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ছিল শ্লোগানে মুখর।
রাস্তার দুপাশে অপেক্ষমান মানুষ বিএনপির এই র্যালীটিকে ম্মরণকালের বৃহত্তম ও সুশৃঙ্খল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।