বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ৯৬নং বটতলা চন্দনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ ওঠা সেই প্রধান শিক্ষককে অবশেষে গ্রেফাতার করেছে পুলিশ। এ সংক্রান্ত গত ১৪ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে বিভিন্ন মহলে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে থেকেই জিউধরা ফাঁড়ি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মোড়েলগঞ্জ থানার এস আই শুভংকর রায়। বুধবার রাতে তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং-১৬, তারিখ-১৯.০১.২০২২।
এক ছাত্রীর বাবার দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানাগেছে, বাদীর ১২ বছর বয়সী মেয়ে ওই বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেনীতে অধ্যায়নকালে ঘটনার দিন গত ৬ ডিসেম্বর দুপুর ২টার দিকে প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল ছাত্রীটিকে তার অফিস কক্ষে ডেকে নেয়। এরপর প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীকে তার কোলে বসিয়ে নানাভাবে যৌন হয়রানী করে। এ ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং জোরকরে বিদ্যালয়ে পাঠালে আত্মহত্যা করবে বলেও তার বাবা-মাকে জানায়। ছাত্রীর বাবা-মা মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় ছাত্রীটি তার মায়ের কাছে প্রকাশ করে যে, সে নিজেসহ একাধিক ছাত্রী বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল কর্তৃক যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে আসছে। আসামি ননী গোপাল হালদার ইতোঃপূর্বে একই এলাকার জিউধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকাকালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মামলায় বলা হয়।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদার ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে আসছেন।
সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি পশ্চিম জিউধরা গ্রামের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করলে ছাত্রীটি বাড়িতে গিয়ে তার নানা-নানির কাছে ঘটনা বলে দেয় এবং সে আর বিদ্যালয়ে যাবে না বলে জানায়। ওই ছাত্রীর ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর পরই প্রধান শিক্ষকের দ্বারা বিভিন্ন সময় একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির ঘটনা সামনে চলে আসে।
অপরদিকে গত ১১ জানুয়ারি ওই ছাত্রীর নানা কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের সূত্র ধরে সরজমিনে গিয়ে ভূক্তভোগী একাধিক ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
যা ১৪ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ আকারে প্রকাশ হলে টনক নড়ে বিভিন্ন মহলের। ওই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল যৌন হয়রানীর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। বিভিন্ন মহলে চলতে থাকে দেন দরবার। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্ঠায় গত রোববার এক শালিস বৈঠকে ছাত্রী ও তার নানাকে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করে ওই প্রভাবশালী মহল।
তবে শেষ খবর অনুযায়ী শালিস বৈঠকে অভিযোগ প্রত্যাহারে বাধ্য করেও শেষ রক্ষা হলোনা। যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া অপর এক ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলার আসামি হয়ে পুলিশের হাতকড়া পড়েই শ্রী ঘরে যেতে হয়েছে প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদারকে।