‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১’র খসড়া সকল অংশীজনের মতামতের জন্য আজ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২’ এ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদানকালে একথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কার্য অধিবেশনে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য সোলেমান খানসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও তার আওতাধীন দপ্তরসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১’র খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
ভূমি দস্যুতা রোধে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষিজমি সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা ‘ভূমি ব্যবহার আইন ২০২১’র খসড়া তৈরিও প্রায় শেষের দিকে রয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী এ সময় জেলা প্রশাসকদের খাস জমি উদ্ধার এবং খাদ্য নিরাপত্তায় তিন ফসলী জমির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি এক স্থানে বিভিন্ন দপ্তরের জন্য ঊর্ধ্বমুখী সমন্বিত সরকারি অফিস করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনটিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ মামলায় (এলএ কেস) মোক্তারনামা (পাওয়ার অব এটর্নি) ব্যবস্থা বাতিল করার ব্যাপারটি বিবেচনাধীন আছে।
তিনি বলেন, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের সময় পাওয়ার অব এটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এটার মাধ্যমে অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত, সাধারণভাবে এলএ কেসে পাওয়ার অব এটর্নি বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশে বসবাসরত ব্যক্তিরা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পাওয়ার অব এটর্নি দিতে পারবেন। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও পাওয়ার অব এটর্নি দেওয়া যাবে।
সকলের মতামতের ভিত্তিতেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান ভূমিমন্ত্রী।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, ভূমিসেবা আরও সহজ করতে ই-রেজিস্ট্রেশন এবং ই-মিউটেশনের ইন্টিগ্রেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে জমির হাতবদলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে। এছাড়াও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) দ্রুত শুরু করা হবে।
বিডিএস বাংলাদেশের সর্বশেষ ‘ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ’ হবে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিডিএস বাস্তবায়িত হলে জমি হাত বদলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খতিয়ান ও ম্যাপ প্রস্তুত হয়ে যাবে। যুগ যুগ ধরে জরিপের হয়রানি থেকে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে।
অধিবেশনে জেলা প্রশাসকগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। খাসজমি, নামজারি, হাট ও বাজার, ভূমি অফিস নির্মাণ, জলমহাল, পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা, কোর্ট অব ওয়ার্ডস, ভূমি সংশ্লিষ্ট জনবল ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনসহ ভূমি সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে কার্য অধিবেশনের আলোচনা করা হয়। বাসস।
জেলা প্রশাসক ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও ভূমি জরিপ ব্যতীত, ভূমি রাজস্ব ও ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল সেবা প্রদানে কালেক্টর হিসেবে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।