শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়া ( খুলনা)জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ। তবে এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতি বছর বনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার চলে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এক শ্রেণীর অসাধু জেলে বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় মাছ ধরার পাস নিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে মা কাঁকড়া ধরেন। এতে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
শিলা কাঁকড়ার প্রধান উৎস সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। আর বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা তাদের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, বন বিভাগের কয়েকজন স্টেশন কর্মকর্তা সপ্তাহে দুজন জেলের নৌকাপ্রতি রাজস্বের টাকাসহ ২০০০-২৫০০ টাকা এবং তিনজন জেলের নৌকাপ্রতি ৩০০০-৩৫০০ টাকা নিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে কাঁকড়া ধরায় সহযোগিতা করছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে ওই কর্মকর্তারা জেলেদের নৌকা থেকে ইচ্ছামতো কাঁকড়া তুলে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও জেলেদের অভিযোগ।
কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক মাস কাঁকড়ার দাম কম থাকলেও বর্তমানে বেড়েছে। কাঁকড়ার জাত ও আকারভেদে সর্বনিম্ন ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুলনা সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সুন্দরবন লাগোয়া জনপদের প্রায় ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে বনের মাছ ও কাঁকড়া ধরে। কিন্তু জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম সুন্দরবনের নদী-খালগুলোতে অসাধু জেলেরা অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন। এতে কাঁকড়া কমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
পূর্ব সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণের অনুমতি নেই। তবে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই কথা বলেছেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।