বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর ২৩ এপ্রিল। তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি দু’বারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই আওয়ামী লীগ সরকারকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই যে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে, এটা নিশ্চিত।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কখন কিভাবে হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ আগামী বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে একজন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হবে। আর সে কারণে আগামী এক বছরের মধ্যে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়টি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের অন্যতম বড় একটি ইস্যু বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এনিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এখনই নানারকম আলাপ-আলোচনা শোনা যাচ্ছে। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নিয়ে নানা রকম মতও পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অন্যান্য যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাঁরা হলেন আওয়ামীগ লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক, যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ড. মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন। তাঁর রয়েছে পরিচ্ছন্ন ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ। ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন মসিউর রহমান। ২০০৯ সালে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন প্রভাবশালী সদস্য, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং সংগঠনের উপ-কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান। একজন দক্ষ এবং কর্মঠ সরকারি আমলা হিসেবে তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯৬৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ১৯৬৫ তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং চাকুরী হতে ছুটি নিয়ে ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোমেসি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্ক বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং একই বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন।
১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর তিনি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকুরী করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন বই এবং আর্টিকেল দেশে এবং বিদেশে খ্যাতনামা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ড. মসিউর রহমানের জন্ম ১৯৪২ সালে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুগন্ধী গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে এ গ্রামেই। ১৯৫৭ সালে তিনি তৎকালীন বাগেরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফাস্ট গ্রেড স্কলারশীপে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৯ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ পাস করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ বিএ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।