ডুমুরিয়ার সমাজে অবহেলিত মানুষটি এখন সমাজসেবক। হাটবাজারে ঘুরে ও নাচগান করে অর্থ উপার্জনই ছিল যার একমাত্র পেশা। সেই তৃতীয় লিঙ্গের সাহিদা বর্তমানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন সমাজ সেবক।
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের দরিদ্র আব্দুল রাজ্জাক মোড়লের সন্তান সাহিদা বেগম (৪৩)। গত ১১নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে মাগুরাঘোনা ইউপি ৪,৫ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচিত হন তিনি।
ছয় বছর বয়সে তিনি চাকুন্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু সহপাঠি ও অন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে তাকে বিদ্রুপ করে কথাবার্তা বলার কারণে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন সাহিদা। মাত্র ১১ বছর বয়সে এক ব্যক্তির হাত ধরে সাতক্ষীরা তৃতীয় লিঙ্গের দলে মিশে যান তিনি। তবে ১৩ বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। এলাকায় এসে তিনি তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের সাথে চলাফেরা শুরু করেন।
মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিবুজ্জামান পিন্টু বলেন, সাহিদা সৎ ও মানবিক। নিজের টাকায় দরিদ্র মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা করে চলেছেন। ঈদের সময় আসলে নিজের টাকা দিয়ে গরু ক্রয় করে মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন। সাহিদা প্রতিবাদী। বাল্য বিবাহ, মাদক ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার তিনি। এ কারণে তাকে ভোটে বিজয়ী করা হয়েছে।
সাহিদা বেগমের একমাত্র ছোট ভাই শহিদ মোড়ল (৩০) বলেন, তারা দুই ভাইবোন। মা-বাবা বৃদ্ধ। সামান্য বাস্তুভিটা ছাড়া তাদের কোনো সম্পদ নেই। শহিদ মোড়ল আরও বলেন, তার বোনের নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাঘা বাঘা প্রার্থী ছিল। এরপরও তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
ইউপি সদস্য সাহিদা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, তার প্রতিপক্ষ নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে বলেছিল, ‘হিজড়াকে ভোট দিলে কিন্তু জাহান্নামে যেতে হবে’। এর জবার দিয়েছেন এলাকার ভোটাররা।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষ এখন তাকে মেম্বর আপা বলে ডাকেন। কেউ আর হিজড়া বলেন না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমাজের অবহেলিতও অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
মাগুরাঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম হেলাল বলেন, সাহিদা তৃতীয় লিঙ্গের হলেও সে অত্যন্ত সৎ এবং আমাকে সে সার্বিক কাজে সহযোগীতা করেন।