শেখ মাহতাব হোসেন :: প্রকৃতির রূপকন্যা শিমুল গাছ এখন ডুমুরিয়ায় বিলুপ্তির পথে। সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক থেকে দেড় যুগ আগেও গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তার পাশে শিমুল গাছ দেখা যেত। প্রতিটি গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্বরণ করিয়ে দিত বসন্ত। শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে দক্ষিণা বাতাসে আম্র মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহতানে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন।
শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ীর ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়, যা দর্শনে হতাশ প্রেমিকের মনেও জাগিয়ে তোলে আশা। প্রকৃতির রূপকন্যা যেন শিমুল ফুল। শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। জোয়ার এনে দেয় কবির কল্পনার জগতে।
কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব।
জানা যায় প্রাকৃতিকভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজ গুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম বামবাক্স সাইবা লিন। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কাণ্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপনের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই ফল হয়। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা-আপনি ফল ফেটে প্রকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। এর ছাল, পাতা ও ফুল পশুর খুব প্রিয় খাদ্য।
বালিশ, লেপ ও তোশক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই। অথচ মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের ফরাদ সর্দারের বাড়ীর পাশে শিমুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা হয় এই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি বাবর আলী সরদারের সাথে। বাবর আলী সরদার বলেন, আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। বর্তমানে এই গাছ বিলুপ্তির পথে। এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে বছরে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।