রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় ডুমুরিয়া উপজেলা শহীদ কমরেড শেখ আব্দুল মজিদ মিলনায়তনে খাসজমি ব্যবস্হাপনা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি কমিটির সভাপতি শেখ সেলিম আক্তার স্বপন, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী হুমায়ূন কবির বুলু, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মাহতাব হোসেন, ইউপি সদস্য খান আবু বকর, উত্তরণ প্রতিনিধি প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার লিগ্যাল এইড এর মেসবাহুর রহমান খান,সেন্টার ম্যানেজার আব্দুল আলীম, কল্যানীরায়, আনোয়ারা সাথী, আরফিন সুলতানা,ইউ পি সদস্য আব্দুল গাফফার গাজী, মনোরঞ্জন দাস, আরজিনা বেগম, আমজাদ হোসেন, বাবুল আক্তার, প্রমুখ।
বাংলাদেশে স্থানীয় শাসিত সরকারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দেশের মানুষ গ্রামে বাস করে। এই ৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সরকার ইউনিয়ন পরিষদ।
ঐতিহাসিকদের ১৫০০-১০০০ গ্রাম পরিষদ নামে অভিহিত ক্ষুদ্র প্রজাতন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়। মৌর্য যুগে (খ্রীষ্ট পূর্ব ৩২৪-১৮৩ অঙ্গ) শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। তপ্ত শাসনামলে (৩২০-৫৩৫) নগর এবং গ্রাম পর্যায়ে স্বায়ত্ত্বশাসনের মাধ্যমে দেশ শাসন করা হত। মোঘল আমালে খানাকে মৌজায় এবং মৌজাকে মহল্লায় বিভক্ত করে মহারি, লঞ্চ বা মল্লিককে তার দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
এ সময় পঞ্চায়েতের উপর গ্রাম প্রশাসনের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছিল পরবর্তীতে বাংলার নবাবরা প্রচলিত স্থানীয় প্রশাসনের কোন পরিবর্তন করেনি। মোঘল সম্রাজ্যের পতনের পর বৃটিশরা তাঁদের স্বার্থে নিজেদের মতো করে শাসন কার্য পরিচালনা করতো ফলে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ১৭৯৩ সালে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কারণে এদেশে চিরস্থায়ী আইন পাশ করার ফলে জমিদার শ্রেণী সৃষ্টি হয়, জমিদারগণ রাজস্ব আদায় ও স্থানীয় রাজার দায়িত্ব লাভ করে। কিন্তু শান্তি শৃঙ্খলার পরিবর্তে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৮৭০ সালে লর্ড মেয়োর আমলে গ্রাম চৌকিদার আইন পাশ হয়। এ আইনে ৫ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত নিযুক্ত করা হয়। ১৮৮৫ সালে স্থানীয় পর্যায়ে অধিক দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৃটিশ বেঙ্গল কাউন্সিলে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন আইন পাশ করেন।
এ আইনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি, মহকুমা পর্যায়ে মহকুমা বোর্ড, জেলা পর্যায়ে জেলা বোর্ড গঠন করেন। ১৯১৯ সালে পল্লী স্বায়ত্বশাসন আইনে চৌকিদার পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন বোর্ড নামে একটি মাত্র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইউনিয়ন বোর্ডের কার্যক্রম প্রথমে তিন বছর এবং পরে ১৯৩৬ সালে চার বছর করা হয়। পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারির মাধ্যমে ইউনিয়ন বোর্ড এর পরিবর্তন করে ইউনিয়ন কাউন্সিল, ঘানা কাউন্সিল, জেলা কাউন্সিল গঠন করা হয়। গড়ে দশ হাজার জনগণের এলাকা নিয়ে ইউনিয়ন গঠিত হবে।
প্রতি এক হাজার লোকের জন্য একজন সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং নির্বাচিত সদস্য ছাড়া সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্য থাকবেন কিন্তু তাদের সংখ্যা নির্বাচিত সদস্যের অর্ধেকের বেশি হবে না। নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যের ভোটে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইচ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। এই নির্বাচন ও মনোনয়ন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ থাকায় দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া সহজ ছিল। ফলে ১৯৬২ সালে মরোনয়ন প্রথা বাতিল হয়ে কাউন্সিল সম্পূর্ণরূপে একটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৭ বলে সব কটি প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া হয়। ইউনিয়ন কাউন্সিল নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়। ইউনিয়ন পঞ্চায়েত। সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৩ সালে ২২ শে মার্চ রাষ্ট্রপতির ২২ নং আদেশ বলে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন পরিষদ রাখা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নকে তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩ জন করে সদস্য এবং গোটা ইউনিয়নে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইচ চেয়ারম্যান এই মোট ১১ জন সদস্য নিয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৬ সালে ২২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পর্যায়ে থানা পরিষদ এবং জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ এই তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
এই অধ্যাদেশে ভাইচ চেয়ারম্যান পদ বাতিল করা হয়। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ১ জন চেয়ারম্যান, প্রতি ওয়ার্ডে ৩ জন করে ৯ জন নির্বাচিত সদস্য এবং ২ জন মহিলা প্রতিনিধি (ত) নিয়ে ইউনিয়ন গঠিত হতো।
১৯৮০ সালে ইউনিয়ন পরিষদ অধ্যাদেশ মোতাবেক ১ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রতি ওয়ার্ড (পুরাতন) থেকে ৩ জনের পরিবর্তে নতুন ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন নির্বাচিত সদস্য এবং ২ জন মহিলার পরিবর্তে প্রতি ওয়ার্ড (পুরাতন) থেকে ১ জন করে নিয়ে মোট ৩ জন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে গ্রাম পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে গ্রাম পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ ও জেলা পরিষন এই ৪ স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার কাঠামো গঠনের আইন পাশ হয়।