খুলনা অফিসঃখুলনা-মোংলা নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে খুলনা ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ভূমি মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, অধিগ্রহণের আওতাভূক্ত নয় এমন ভূমি এবং ভুয়া ভূমি মালিক সাজিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, একই দাগের ভূমির ক্ষতিপূরণ একাধিকবার দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে এ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, খুলনায় ভূমি অধিগ্রহণে চেক হাতে পেতে মোট টাকার ৬ শতাংশ টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে জেলা প্রশাসকের এল এ শাখায়। তবে এ সকল দুর্নীতির জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলেও খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ধরা-ছোয়ার বাহিরে।
সমায়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখার অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নিত্য গোপাল ও কানুনগো সুব্রত সরদার এবং তৎকালীন সার্ভেয়ার বর্তমানে রামপাল উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার কামাল হোসেন। গত ২০ মে এই তিন কর্মকর্তাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানান যায়, খুলনা-মোংলা নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে ওই তিন কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, অধিগ্রহণের আওতাভূক্ত নয় এমন ভূমি এবং ভুয়া ভূমি মালিক সাজিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, একই দাগের ভূমির ক্ষতিপূরণ একাধিকবার দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা এই প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, এতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি-১২ অনুযায়ী এই তিন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভূমি অধিগ্রহণে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে রয়েছে। সূত্র জানায়, বটিয়াঘাটা ঝরভাঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা মৌজা এলাকার ৪০/৫০টি পরিবারের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণের মোট টাকার উপর ৬ শতাংশ টাকা আগ্রিম দিতে হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থদের । আর এই টাকার ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন মোখলেছ ও অতিরিক্ত ভুমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা বিজয় কুমার সিংহ রায়। খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখার অধিকাংশ কর্মকর্তা অধিগ্রহনকৃত ভুমি মালিকদের কাছ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে এ অর্থ আদায় করেন । বাগেরহাট অংশের ন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের কাছ থেকে গোপনে তদন্ত করলেই বেরিয়ে যাবে বিজয় ও মোখলেছগংদের দুর্ণীতি ও অনিয়মের তথ্য ।
খুলনা অংশে ভুমি অধিগ্রহন করা হয়েছে প্রায় ৪০১ একর জমি । আর এই জমির মালিকদের সাথে আগাম ৬ শতাংশ টাকা নেওয়ার বিষয় ড্রিল করছেন সার্ভেয়ার মোখলেচুর রহমান। মোখলেচুর রহমান ক্ষতিগ্রস্থ সবার সাথে চুক্তি করেছেন। যাদের ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে সকলেরই ৬ শতাংশ টাকা আগাম দেওয়া লেগেছে। অগ্রিম অর্থ পরিশোধ ছাড়া মোখলেচুর রহমান ক্ষতিগ্রস্থদের নামে চেক ইস্যু করবেন না এই মর্মে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার টাকা দিতে রাজি হয়নি। সে কারনে অফিস থেকে তাদের চেক ছাড়াতো হয়নি সঙ্গে নানা তালবাহানা করা হয় । পরবর্তীতে যারা মোকলেছ এর দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি হয়েছে তারা চেক হাতে পেয়েছে । ফজলু(ছদ্দ নাম) জানান, আমাদের ৩০ লাখ টাকার চেক ছিল, এ জন্য মোখলেচুরকে ৬ শতাংশ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিছু টাকা তিনি নগদে হাতে নিয়েছে এবং বাকি অর্থ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পানের দোকানদারের কাছে দিতে বলেছে। এছাড়া ভুমি সার্ভের সময় বিল বেশি করে দেওয়ার জন্য মোখলেছ ক্ষতিগ্রস্থ যাদের নিন্মমানের বাথরুম ছিল, সেখানে টাইলস্ বাথরুম, যার বাসায় ছাঁদ ছিল না সেখানে ছাঁদ আছে, গাছ ছিল ৩-৪টা ওখানে ১৫-২০টা বড় বড় গাছ আছে এ সকল মিথ্যা তথ্য সার্ভে উল্লেখ করার জন্য, তিনি ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, আমাদের পাশে একজনের ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে, তার ভাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) হওয়ায় তার কাছ থেকে মোখলেচুর রহমান টাকা চাওয়ার সাহস পায়নি। তাই তাকে ভূমি অধিগ্রহণের ৬ শতাংশ টাকা দিতে হয়নি। সূত্রটি জানান, ভুমি মন্ত্রনালয় ও দুদক সঠিক অনুসন্ধান করলে এ প্রকল্পের আরও অনেক দুর্নীতি বেড়িয়ে আসবে। এ বিষয়ে কথা হয় খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ শাখার সার্ভেয়ার মোখলেচুর রহমানের সাথে, তিনি জানান টাকাতো আমি একা খাইনি ,আপনি অফিসে আসেন এবং অফিসের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে বলে লাইনটি কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সরকার খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। খুলনা-মোংলা নির্মাণাধীন রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরমধ্যে রেললাইনে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ব্রিজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৮ কোটি টাকা।