মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে এ মামলায় জড়ানো হচ্ছে বলে দাবী করেছেন বাবুল আক্তারের বাবা মো: আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া। তিনি বলেন, এ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী কামরুল ইসলাম মুসাকে ইচ্ছে করে পিবিআই নিঁখোজ রেখে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষীদের বাবুল আক্তারের বিপক্ষে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বাবুল আক্তারের বাবা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো: আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া গত ২ আগষ্ট , ২০২২ পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবী করে একটি লিখিত আবেদনে উপরোক্ত কথা বলেছেন।
উক্ত আবেদনে তিনি বলেন, গত ২৩ জুন ২০২২ দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘মিতু হত্যা মামলায় নতুন মোড়, ভয় দেখিয়ে আসামি ভোলার স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদে বলা হয়েছে মিতু হত্যা মামলার আসামি ভোলাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোর করে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করা হয়। এহতেশামুল হক ভোলা এ ব্যাপারে আগে এবং পরে ক্রমফায়ারের ভয় দেখানোর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে বাবুল আক্তার সম্পূর্ণ নির্দোষ। তা না হলে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে কেন বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নেয়া হবে? তিনি আরো বলেন, পিবিআই অন্যান্য স্বাক্ষীদেরও ভয় ভীতি দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি। আমার বৌমা হত্যা মামলায় এক একজন স্বাক্ষীর দুই দুইবার করে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করছে।
বাবুল আক্তারের বাবা বলেন, আমার ছেলে চট্রগ্রামে চাকুরীতে থাকা অবস্থায় অবৈধ্য স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বনজ কুমার মজুমদারের অনৈকিত হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যেত। যার ফলশ্রুতিতে পিবিআই প্রধানের সাথেআমার ছেলের পেশাগত দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ মামলাটি যখন পিবিআইয়ের হাতে যায় তখন বাবুলকে কিভাবে এ মামলায় জড়িত করা যায় সে লক্ষ্যে তিনি তার অধীনে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাজে লাগান। এই মামলা চট্টগ্রাম গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যদার এক জন কর্মকর্তা দীর্ঘ ৩ বছর তদন্ত করেন। সে তদন্তে কথাও আমার ছেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
বাবুলের বাবা বলেন, মিতু হত্যা, জোর করে বাবুলের চাকরি থেকে অব্যাহতিপত্র লিখিয়ে নেয়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের সোর্স মূসাকে গ্রেফতার না করা, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায়-সবগুলো একই সূত্রে গাঁথা। পিবিআই এ বিষয়গুলো তদন্ত না করে বাবুলের তথাকথিত পরকীয়ার গল্প প্রমাণ করতে অনেক বেশী সচেষ্ট। কারণ বাবুলের বিরুদ্ধে এ ধরণের সংবাদ গণমাধ্যমগুলোর কাটতি বাড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে পিবিআই সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা করছে।
বাবুল আকতারের বাবা আবেদনে বলেন, অবস্থাদৃষ্টে আমার মনে হচ্ছে পিবিআই মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করে, চরম পক্ষপাতমূলক তদন্ত করে কিভাবে এ মামলায় বাবুলকে জড়ানো নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়েই তারা বেশী সচেষ্ট। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে, তথাকথিত পরকীয়া প্রেম জোড়াতালি দিয়ে যুক্ত করে, স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রমাণ করে বাবুলের সাজা হয়তো মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে কোনোভাবে দেয়া যাবে। কিন্তু এই তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিতু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে না।
বাবুল আক্তারের বাবা বলেন, সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বাবুল আক্তার দোষী সাব্যস্থ হলে আমি তা অবলীলায় মেনে নেব। পিবিআই বাদে অন্য যে কোনো সংস্থা দিয়ে পুরো ঘটনার সম্পূর্ণ নতুনভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।
এ ব্যাপারে আজ (বৃহস্পতিবার) সাবেক এসপি বাবুল আকতারের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট মো: হাবিবুর রহমান মাগুরার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো বাবুল আকতারের বাবার আবেদনপত্রটির কপি সরবরাহ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমার বড় ভাই একজন চৌকস পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি জঙ্গী, স্বর্ন চোরাচালান, অপরাধ দমন এবং মাদক বিরোধী অভিযানে আকাশচুম্বী সফলতা দেখিয়েছেন। তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি তিন তিন বার পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পেয়েছেন। স্ত্রী হত্যার ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যা দিয়ে সাজানো। এই মামলার আসামী মুসাকে তারা লুকিয়ে রেখে, বড় ভাইয়ের সাথে জুড়ে দেওয়া কথিত পরকীয়া প্রেমিককে সামনে না এনে, জোর করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আাসমী ভোলাকে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য গ্রহণ প্রমান করে এটি একটি সাজানো মামলা। এ বিষয়গুলো যাতে কোনভাবেই সামনে না আসে সে কারনে তারা আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই তা গনমাধ্যমে সরবরাহ করে তা সর্ব সাধারনের মাঝে বিশ্বাসযোগ্য করতে চেষ্টা করছে, যাতে বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযোগগুলো সহজেই মানুষ বিশ^াস করে। তিনি আরেও বলেন, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যে কোন ধরণের বিচার আমরা বড় ভাইয়ের ব্যাপারে মেনে নেব। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, বড় ভাইয়ের শ^শুর সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা সাংবাদিকদের বলছেন। ভাইয়ের সাথে ভাবীর সম্পর্ক অনেক মধুর ছিল। তাদের সম্পর্ক খারাপ নিয়ে কোন দিন ভাবীর পরিবার থেকে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে করেন নি। সালিশের তো প্রশ্নই আসে না। আমার ভাবী খুন হওয়ার এক বছরের মধ্যে কখনও ভাই ভাবীর দাম্পত্য নিয়ে কোন প্রকার অভিযোগ তোলেনি আমার ভাইয়ের শ্বশুর। এমকি সেই সময়ে তারাই বিভিন্ন মিডিয়ায় তার মেয়ে জামাইয়ের ১৪ বছরের সংসারে কোন অশান্তি ছিল না বলেও দাবি করেন। সেই সময়ে চট্টগ্রাম গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার নিকট মেয়ে জামাইয়ের মাঝে কোন অশান্তি ছিল না বলেও জানিয়ে আসেন তারা।