ডুমুরিয়া (খুলনা) জলবায়ু সহনশীল সমাজ ভিত্তিক মাছ চাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন নারীরা।
নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সমাজ ভিত্তিক মাছ চাষ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনগ্রসর নারীরা নতুন আশার জাল বুনছেন। উপজেলা মৎস্য অফিস ও নারী মাছ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর কমিউনিটি বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকোয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর মে মাসে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট অনগ্রসর নারীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণে উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতিয়া জেলে পাড়ার ১২ জন নারী ২ বারে মোট ৪ দিন ধরে অংশ নেন এবং সেই প্রশিক্ষণের আলোকে মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ওই ১২ নারীর সঙ্গে এলাকার আরও ১৩ পুরুষকে নিয়ে রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও সমিতি গড়ে তোলা হয়।
প্রত্যেক সদস্য মাসে ২শ টাকা করে চাঁদা ও প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংকে একাউন্ট খোলার পর মোট ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন। পরে জুন মাসে মাছ চাষের জন্য দু;জনের কাছ থেকে বছরে ৭০ হাজার টাকা হারি চুক্তিতে হরি নদীর চরে ১ একর জমি লিজ নেন। তখন মৎস্য অফিস থেকে ওই সমিতিকে মাছ চাষের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। ততদিনে লিজ নেওয়া জমিটি মাছ চাষের জন্য তৈরি করে জুন মাসের ২০ তারিখে সেখানে সাড়ে ১৫ হাজার বাগদা ও ২০ হাজার ৮শ গলদা রেণুসহ বিভিন্ন প্রকার সাদা মাছও ছাড়া হয়। সম্প্রতি ওই খামার থেকে ৩০ হাজার টাকার বাগদাও বিক্রি করা হয়েছে। নারীদের তত্ত্বাবধানে মাছ চাষের এ প্রকল্পটি দেখে এলাকাবাসীর মধ্যে দারুণ সাড়া পড়েছে। এ প্রসঙ্গে মাছ চাষি স্বপ্না রানী খামারের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, শোলগাতিয়া এলাকায় হাজারেরও বেশি চিংড়ি ঘের আছে, কিন্তু মৎস্য অফিসের অনুপ্রেরণায় এই প্রথম আমরা এলাকার মেয়েরা ১টা ঘের করেছি। খুব আনন্দ লাগছে। সুমতি বিশ্বাস বলেন, এই মাছ চাষের জন্য ঘর থেকে একটু বের হতে পারছি, অনেক আশা নিয়ে মাছ চাষও শিখছি। কল্পনা বিশ্বাস বলেন, স্বামীর টাকায় হিসাব দিতে হয়,
কিন্তু আমরা উপার্জন করলে কাউকে হিসাব না দিয়েই নিজের ইচ্ছামতো কিছু সঞ্চয় বা খরচও করতে পারবো। রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিওর সভাপতি মুক্তা বিশ্বাস বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের সার্বিক সহায়তায় আমাদের মেয়েদের মাছ চাষ কার্যক্রম
এগিয়ে চলেছে। আমাদের সকল লেন-দেন ব্যাংকের মাধ্যমে চলছে। আশা করছি এই সমিতির মাধ্যমে এলাকায় নারীরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরায় বাগদা চাষ প্রকল্পে ২ লাখ ৭ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ওখানে মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর উপজেলার ওড়াবুনিয়ায় নারীদের গলদা চাষ প্রকল্পও চালু
হয়েছে। তাছাড়া খুব শিঘ্রই আকড়ায় নারীদের মাছের জাল বোনা ও নলঘোনায় মাছ চাষ ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রকল্প চালু করা হবে। সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও খুলনা-৫ সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমাদের মেয়েরা মাছ চাষে এগিয়ে এসেছে, এটা খুবই শুভ ইঙ্গিত। তাদেরকে ভেনামী চিংড়িসহ মাছ চাষের উন্নত পদ্ধতির প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক সহয়তাও দিতে হবে। মাছে-ভাতে বাঙ্গালী এই শ্লোগানের মতো প্রতিদিনই আমরা মাছ খাই। তাই মাছের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশবাসীর চাহিদা যেমন- মিটবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কয়েক বছরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রপ্তানি আয়।পাশাপাশি মাছ চাষের মাধ্যমে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। মাছ একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ করছে তেমনি মাছ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।