শুক্রবার বিকালে এনএটিপি-২ প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান খাঁন। অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন মোহাম্মদ মহাসিন, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, এনএটিপি-২, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা, জয়দেব পাল, জেলা মৎস্য অফিসার, খুলনা, এস এম খালেকুজ্জামান, সহকারী পরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা, মোঃ নওশের আলী, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ভবন, ঢাকা।
এ সময় প্রতিনিধি দল শোলগাতিয়া আধুনিক মৎস্য আড়ত পরিদর্শন করেন। আড়তটি প্রতিষ্ঠায় এআইএফ-৩ ফান্ড হতে পাঁচ লক্ষ আশি হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন প্রকল্পটি। আড়তটি প্রতিষ্ঠার ফলে এলাকার মৎস্যচাষিরা সহজে ও ন্যায্যমূল্যে তাদের মাছ বিক্রি করতে পারছেন। প্রতিনিধি দল শোলগাতিয়ার চহেড়া মিশ্রচাষি সিআইজি সমিতির চাষি নিরঞ্জন ফকিরের গলদা-কার্প মিশ্রচাষের প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে গলদা-কার্প মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন দেখে সকলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জাল টেনে প্রাপ্ত মাছের মধ্যে গলদা ১০০ গ্রাম প্রতিটি ও রুই বড়গুলো ২-৩ কেজি এবং ছোটগুলো ১ কেজি সাইজ পাওয়া যায়। প্রকল্প হতে চাষিকে বিশ হাজার টাকার উপকরন প্রদান করা হয়। অতঃপর তারা খর্ণিয়ায় প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত মৎস্য প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায় এখানে প্রকল্প হতে ৫ টনের একটি পিক-আপ ক্রয়ে ৫ লক্ষ একাশি হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। পিক-আপটি বর্তমানে ডুমুরিয়া উপজেলার ৭৫০ জন সিআইজি নন সিআইজি চাষিদের মাছ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পিক-আপ হতে প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনের বর্তমান গড় আয় প্রায় বিশ হাজার টাকা।
এছাড়া প্রকল্প হতে দুইটি পিলেট ফিড মেশিন প্রদান করা হয়েছে। এ মেশিন দ্বারা সিআইজি চাষিরা চাহিদা মত খাদ্য তৈরী করতে পারেন।
বর্তমান পিলেট ফিড মেশিন হতেও গড় আয় ৩-৫ হাজার টাকা। সমিতির ব্যাংক স্টেটমেন্ট হতে দেখা যায় তাদের হিসাবে প্রায় ৩ লক্ষ আটচল্লিশ হাজার টাকা জমা আছে। প্রান্তিক চাষিদের মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা দিচ্ছে সংগঠনটি।
শুক্রবার সন্ধায় প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেন হাজিবুনিয়া বিলে এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত বিল ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা যায় বিলে মৎস্যজীবীদের নিয়ে ৬০ সদস্যর একটি সুফলভোগী দল গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পের অর্থায়নে বিলে ০.২৫ হেক্টরের একটি নার্সারি খনন করা হয়েছে। নার্সারিতে রুই জাতীয় মাছের ২ কেজি রেনু লালন পালন করে চার লক্ষাধিক পোনা তৈরী করে বিলে অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া বিলে প্রকল্পের অর্থায়নে ৭৫০ কেজি দেশীয় প্রজাতির কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, পাবদা, গুলশা মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয় যার শুভ উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ। মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য বিলে প্রকল্প হতে একটি অভয়াশ্রমও করে দেওয়া হয়েছে। সুফলভোগীরা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বর্তমান ৩ মাস সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন।
বিলটি দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের লিফ শংকর মিস্ত্রী বলেন বিলে এত মাছ আগে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে জলের চেয়েও মাছ বেশি। মৎস্যজীবীরা আগের চেয়ে বেশি সচেতন কারন মৎস্য অফিস হতে একাধিকবার সচেতন সভা করা হয়েছে। বিল ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের ফলে বিলে মাছের প্রাচুর্যতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সবশেষে দলটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত এআইএফ-৩ ফান্ডের প্রকল্প ডুমুরিয়ার হাজিডাঙ্গায় ফিশ স্কয়ার পরিদর্শন করেন। ফিশ স্কয়ারে মাছের হরেকরকমের আইটেম পাওয়া যায়। ফিশ স্কয়ারের উদ্যোক্তা ডুমুরিয়ার সরদার বাড়ীর রায়হান সরদার। মৎস্য অধিদপ্তর এনএটিপি- ২ প্রকল্প হতে তাকে তিন লক্ষ পনের হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। নিজের টাকা ও প্রকল্প অনুদান দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা যায় মাছের তৈরী বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার। গ্রামের প্রত্যান্ত অঞ্চলে
পাওয়া যাচ্ছে ফিশ নুডুলস, ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ সিংগাড়া, ফিশ বার্গার, ফিশ কাবাব, ফিশ বল, ফিশ সমোচা, ফিশ কাটলেট ইত্যাদি সুস্বাদু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। সত্যিই অনন্য অসাধারণ এক সৃষ্টি এই ফিশ স্কয়ার। রায়হান সরদার বলেন কম মূল্যের তেলাপিয়া ও কার্প মাছ ব্যবহার করে তিনি এই ভ্যালু এডেড প্রোডাক্টস তৈরী করেন। বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তিনি মাসিক ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ করছেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান আতাউর রহমান খাঁন, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন এনএটিপি-২ প্রকল্প মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের বাজার ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য পন্যের ব্রান্ডিং নিয়ে কাজ করছেন যা প্রশংসার দাবী রাখে।