কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ কে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় প্রতিবাদ করেছে এলাকাবাসী। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভাল দুধকে ভেজাল বানিয়ে স্থানীয় একটি মহলের ইন্ধনে তাকে জেল-জরিমানা করা হয় বলে তাদের অভিযোগ। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তাদের দাবি, তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের কালিপদ ঘোষের ছেলে প্রশান্ত ঘোষ দীর্ঘদিন এলাকায় সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি ভোটের মাধ্যমে মিল্কভিটার কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে একটি মহল তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই সূত্র ধরে সমিতির সরবরাহকৃত দুধকে ভেজাল দুধের অজুহাত দিয়ে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে ওঠে কুচক্রী মহলটি।
সরেজমিনে গেলে সুবাস ঘোষ, সুকান্ত ঘোষ, ফিরোজ মোড়ল, রবিউল ইসলাম,নজরুল ইসলাম, জামাল খাঁ, নায়েব আলীসহ অনেকেই জানান, প্রশান্ত ঘোষ দীর্ঘদিন এলাকায় সুনামের সাথে দুধের ব্যবসা করে আসছে। তার বিরুদ্ধে কোনদিন কোন ধরণের অভিযোগ শোনা যায়নি। অথচ তাকে বিনা কারণে জেলা-জরিমানা করা হয়।
তারা বলেন, প্রশান্ত ঘোষের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে কিছু জেলি জাতীয় দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। উক্ত জেলি মূলত মাছের খাদ্য, চকলেট, চুইনগাম, লিচু, বিস্কুট, টোস্ট এগুলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর উদ্ধারকৃত দুধ সমবায় সমিতির, এটি প্রশান্ত ঘোষের ব্যক্তিগত নয়। সমিতির ভোট সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসিয়েছে। তারা পুরো ঘটনাটি পুনরায় তদন্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ঐদিন সমবায়ীদের দুধ সাতক্ষীরা নেয়ার জন্য ইঞ্জিনভ্যানে উঠানোর সময় কয়েকজন ব্যক্তি এসে হাজির হন। আমি তখন মাঠে ছিলাম। মাঠ থেকে খবর দিলে সেখানে এসে হাজির হই। এখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আমাকে জেল-জরিমানা করা হয়। ২০০৫ সালের ২৮ আগষ্ট থেকে আমি বিনেরপোতা মিল্কভিটা কোম্পানীতে সুনামের সাথে দুধ সরবরাহ করে আসছি। অদ্যবধি কোনদিন উক্ত দুধে ভেজাল প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া ঐ দুধগুলো আমার নিজস্ব খামারের নয়, এটি সমবায়ীদের। আর সকালের দুধ বিকালে পরীক্ষা করার কারণে রংটা একটু ভিন্ন দেখা যাচ্ছিল। এছাড়া ঐ দুধে কোন সমস্যা ছিল না।’
স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রেহানা খাতুন বলেন, ‘প্রশান্ত ঘোষ একজন সফল খামারী। আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে তার কাছে দুধ সরবরাহ করে আসছি। ভেজাল দুধের কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কোনদিন শোনা যায়নি। তিনি স্থানীয় ষড়যন্ত্রের শিকার।’
সাতক্ষীরার মিল্কভিটার ম্যানেজার ডা. আকতার হোসেন নভেল জানান, প্রচলিত বিধি মোতাবেক ভেজালমুক্ত দুধ নেয়া হয় তাদের কোম্পানীতে। প্রশান্ত ঘোষের সমিতি থেকে যে দুধ সরবরাহ করা হয় তা সর্বোচ্চ ভাল দুধ হিসেবে বিবেচিত।
মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইভি সাহা বলেন, ২০০৫ সাল থেকে প্রশান্ত ঘোষ মিল্কভিটা কোম্পানীতে দুধ সরবরাহ করে আসছেন। এলাকায় তার বেশ সুনাম রয়েছে। অদ্যবধি কোন ভেজাল দুধ তিনি সরবরাহ করেননি।
উল্লেখ্য, তালায় ভেজাল দুধ উৎপাদনের অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা দুগ্ধ সমবায় সমিতির সভাপতি প্রশান্ত ঘোষকে ৬ মাসের কারাদান্ড ও ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে, আরো ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে ভ্রম্যামান আদালত। তিনি তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের মৃত কালিপদ ঘোষের ছেলে এবং বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা দুগ্ধ সমবায় সমিতির সভাপতি।