ডুমুরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখলের মহোৎসব থামছে না । রাত-দিন চলছে দখলদারিত্ব। নেই পাউবো’র মাথা ব্যথা। অন্যান্য কর্তৃপক্ষও নিরব। শুধুই সরব দখলদাররা।
ডুমুরিয়া ভান্ডারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চানন চক্রবর্তী। তিনি গত ১০ দিন ধরে ২৯ নম্বর পোল্ডারের অর্ন্তভ‚ক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুকুর মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট করছেন। থুকড়া গ্রামের বাসিন্দা সরদার আব্দুল কুদ্দুস। শ’শ একর পাউবোর জায়গা দখল করে আবার বিক্রিও করছেন। একতলা বাড়ি বানিয়ে দিব্বি বসবাস করছেন ভান্ডারপাড়া গ্রামের মাওঃ আব্দুস সামাদ। শুধু পঞ্চানন, সামাদ বা কুদ্দুস সাহেবরা না এমনই শ’শ মানুষ খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করছে নিত্য। তৈরি করছে বড় বড় স্থাপনা। কাটছে পুকুর-নদী-খাল। আবার কেউবা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিন ভান্ডারপাড়া গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, ২৯ নম্বর পোল্ডারের অর্ন্তভুক্ত ওয়াদার পাশে একটি পুকুর মাটি দিয়ে ভরাট প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জানা যায়, ওই গ্রামের পঞ্চানন চক্রবর্তী ও তার ৪ ভাই মিলে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে সেটি ভরাট করছে। ডুমুরিয়া মৌজার এল এ ৬/৬৭-৬৮ কেস এ ৩ নম্বর সিটে’র এস এ ৮৩ নম্বর খতিয়ানের ১৭৮০/২৪৪১ ও ১৭৮০/২৪৪২ নম্বর দাগের ওই পুকুরটি পাউবো’র অধিগ্রহনকৃত জায়গা। জমিটির কিছু অংশ তাদের দাবি করে পঞ্চানন চক্রবর্তী বলেন, গরুর ঘাস লাগানোর জন্য পুকুর ভরাট করে উচুঁ করা হচ্ছে। তার পাশেই মাওঃ আব্দুস সামাদ বিশ্বাস পাকা ঘর করে দিব্বি বসবাস করছেন।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ডুমুরিয়া মৌজার ৮৫ খতিয়ানের ১৭৮০ দাগের জায়গায় ওই পাকা ঘর। থুকড়া সমবায় সমিতির দখলে ২৫ নম্বর পোল্ডারের রয়েছে শ’শ একর জমি। এসব জমি লম্বা দামে বিক্রি হয়েছ। কোন কবলা দলিল করতে না পারলেও নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে বিক্রি করা হয়েছ।
সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, থুকড়া জনতা সমিতির পরিত্যক্ত গার্মেন্টেস’র দক্ষিণ পাশে নদীর কিনারায় পানি উন্নয়ণ বোর্ডের জায়গায় বাড়ি নির্মান করছে কয়রা এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম। তার পাশে জামানো খুটি দিয়ে ঘর তৈরি করছে থুকড়া এলাকার জাহিদ সরদার।
এছাড়া অনেক মানুষ নদীর দু’পাড়ে পাউবোর জায়গা অবৈধ্য দখল করে স্থাপনা নির্মান করায় ব্যস্ত রয়েছে। এখানে থুকড়া ও আমভিটা এলাকায় অনেক জমি পানি উন্ন্য়ণ বোর্ডের ২৫ নম্বর পোল্ডারের অর্ন্তভুক্ত।
এসব জমির অধিকাংশ অবৈধ্য দখলদারের দখলে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। সব চেয়ে বেশি জমি দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি করেছে থুকড়া জনতা সমিতি। বেশি মুনাফার লোভে হাজার হাজার মানুষ এ সমিতিতে টাকা আমানত রাখেন। কিন্তু সমিতির সর্বময় কর্তা সেসব টাকা নিজের
বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করায় সমিতিটি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন নতুন কৌশল হিসেবে পাউবো’র এসব জায়গা নিজেদের দাবি করে অনেককে ভোগ দখলের জন্য ভ‚য়া ইজারা দিয়েছেন। মঞ্জুরুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, সাহেবকে (জনতা সমিতির কর্তাব্যক্তি আব্দুল কুদ্দুস) টাকা দিয়ে দুই কাঠা জমি নিয়ে বাড়ি করছি। জনতা সমিতির কোন সদস্য কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন তারা এখনও এখানকার ভোটার না। আমরা কয়রা উপজেলার আংটিহারা গ্রাম থেকে ২/৩ বছর আগে থুকড়া এলাকায় এসে বাসা ভাড়া করে দিনমুজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। একমাস আগে টাকা দিয়ে এ জায়গা নিয়েছি। পাশেই জাহিদ সরদার পিলার দিয়ে ঘর বানা গেছে। এছাড়া অনেকেই নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে জনতার কাছ থেকে এসব জায়গা নিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
এব্যাপারে পাশের জমির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নাজিম উদ্দীন বলেন, আমাদের জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ আগে একর করে নেয়। পরবর্তীতে ৫৭ শতাংশ জমি পাউবো থেকে ইজারা নেওয়া হয়। এ জমি তাদের দখলে দাবি করে বলেন, জনতা সমিতি হঠাৎ দেখছি অন্যদের কাছে তাদের জমি বিক্রি করছে। জনতা সমিতি’র দাবি করে বিক্রি করছে।
এ ব্যাপারে জনতা সমিতির প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এস এম গোলাম কুদ্দুস বলেন, ও জমি আমাদের ছিল। পাউবো অধিগ্রহণ করার পর আমরা ডিসিআর কাটতে থাকি। এখন আমাদের সদস্যদের নাম মাত্র মুল্যে বিক্রি করছি ডিসিআর মুলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসেম আলী বলেন, গত মঙ্গলবার ২৯ নম্বর পোল্ডারে বেশ কয়েক জায়গায় দখলদারিদের মৌখিক সর্তক করা হয়েছে।
আপনি সরেজমিন যেয়ে কাজ করা বন্ধ করলেও এখনও নেট দিয়ে ঘেরাবেড়া দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসে এসে লিখিত মুচলেকা দিয়েছে। এর পরেও কাজ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রতৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, প্রভাবশালীদের কারনে অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।