খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। শনিবার (২০ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শুক্রবার (১৯ মে) খুলনায় যে কারবালাটি রচনা করা হলো এটি নজিরবিহীন। অন্যান্য জেলাতে তো সমাবেশ হয়েছে। বাঁধা দিয়েছে নানাভাবেই। কিন্তু এইভাবে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে নেতা-কর্মীদের পঙ্গু বানাবে, এটা কোন গণতন্ত্রের ভাষা। এটা আজকে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে জনগণের কাছে। জনসভা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এখানে সংঘাত-সংঘর্ষের তো কিছু নেই। কিন্তু পায়ে পাড়া দিয়ে খুলনার পুলিশ-প্রশাসন এই রক্তাক্ত সংঘর্ষের সৃষ্টি করেছে। এই সহিংস সন্ত্রাসের জন্য দায়ী খুলনার পুলিশ প্রশাসন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন যে উনি গণতন্ত্র দিয়েছেন, উনিই গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। অন্য কোন দেশ যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে আমরা তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনবো না। কিন্তু আবার দেখা যাচ্ছে যে সেই দেশের ফার্নেস অয়েল থেকে শুরু করে অন্যান্য জ্বালানির জন্য সেই দেশের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে। এই দ্বিচারিতা এবং এই দ্বিমুখী কথা-বার্তা এই সরকারের সাজে এজন্যই যে এদের কোনো গণভিত্তি নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। একেবারে বন্দুকের নলে তারা টিকে আছে।’ ‘এই নির্বাচন কমিশন একটা ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন কি নির্বাচন করছে, এটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করে।’ রিজভী আরো বলেন, ‘সরকার ভীত হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে। সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন কিংবা আন্তর্জাতিক মহলের নেই সমর্থন। এ দেশে দিনের ভোট রাতে হয়, তা নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব সমালোচনা করছে।’ এর আগে শনিবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে খুলনায় এসে তিনি পুলিশের হামলায় আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যান।
এসময় তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসার সহায়তা প্রদান করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসব্রিফিং এ খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘সমাবেশে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বক্তব্য দিতে দেয়নি। উল্টো আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে
মামলা দায়ের করেছে। হামলা-মামলা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দমন করা যাবে না।’
এ দিকে শুক্রবারের ঘটনায় খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালিদ উদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপির ১৩৪৯জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও মহানগরের সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সোহেল রানা (২০), গাজী সালাউদ্দীন (৪২), আতাউর রহমান (৪৮), সেকেন্দার শেখ (৬০), শাইখুল মোল্লা (৩৪), ওয়াহিদ শেখ (৩২), রাসেল (২৪), রাব্বি চৌধুরী (২৯), মাহবুব গাজী (২৬), মনিরুজ্জামান মামুন (৪২), রাজু শেখ (৪১), আলিফ মিলন (৩১) ও রাসেল (২৭)।
খুলনা বিএনপির নিন্দা: শুক্রবার বিএনপির শান্তিপুর্ণ কর্মসুচিতে কোনধরণের উস্কানি ছাড়া পুলিশের হামলা, লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বিএনপির প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করা ও পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও মহানগরের সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক মনিরুল হাসান বাপ্পিসহ ১৩ শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। শনিবার (২০ মে) মিডিয়া সেল প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন বন্দুকের নলের জোরে বর্তমান সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার যে স্বপ্ন দেখছে দেশের জনগন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেবে না। জনস্রোতে অবৈধ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান।