বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন অধ্যুষিত কয়রা উপজেলা । সুন্দরবনসহ আয়তনে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা এটি। সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ী, নারিকেল, গোলপাতা, মধু সমৃদ্ধ এ জনপদ । কপোতাক্ষ আর শিবসা নদী এ উপজেলার জনবসতির ভূখন্ডকে মূল ভূখন্ড হতে পৃথক করে একটি নদী বেষ্টিত দ্বীপে পরিণত করেছে। সামুদ্রিক ঝড় ‘সিডর’ ও আইলা’য় আক্রান্ত হয় ২০০৭ ও ২০০৯ সালের এ দুটি ঝড়ে কয়রা প্রায় বিরাণভূমিতে পরিণত হয় । উপকূলীয় কয়রার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসছে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নবারুন সংঘ ।
নবারুন সংঘের উদ্দ্যোগে শুরু হয়েছে উপকূলে তাল গাছ রোপন কর্মসুচি। বেশি করে তালগাছ লাগাই বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাই’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়, বিশেষত বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে ১ লক্ষ তাল বীজ বপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রায় ময়না নবারুন সংঘ নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
শুক্রবার সকালে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশীর ইউনিয়রের ৫ নং ওয়ার্ডের বতুল বাজার এলাকায় তাল গাছের চারা রোপণ করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানী ও সংগঠনের সদস্যরা। উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষাধিক তাল গাছের বীজ বপনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ময়না নবারুন সংঘের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন বলেন, তালগাছ সাধারণত বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করাসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। অথচ কালের বির্বতনে বাংলাদেশে তাল গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে এবং দেশে প্রতিনিয়ত বজ্রপাতের আঘাতে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অংখ্য মানুষ। তালগাছ বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উঁচু গাছেই বেশি বজ্রপাত হয়। উঁচু গাছ থাকলে এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি লাঘব হয়। তাই বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির অংশ হিসবে আমরা তাল বীজ বপন করছি। এ উদ্যোগ চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। সংগঠণের সদস্যদের দ্বারা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে তাল গাছের চারা অথবা বীজ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ হারুনর রশিদ, বলেন, তালগাছ একদিকে যেমন বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে সহায়ক, অন্যদিকে পরিবেশের উষ্ণতা রোধেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই গাছ আগা সূচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক হিসেবে আবাদ করা খুবই জরুরী। এছাড়া এ গাছের ফল ঔষধীগুণ সমৃদ্ধ। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নবারুন সংঘ’র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান ।