খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় ৬১২ বিঘা জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩৫ বিঘা জমি। দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এ ধানের আবাদ করেছেন। অসময় লবণনাক্ত পতিত জমিতে বাম্পার ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় রবি ফসলের পর আউশ মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা আবাদ যোগ্য জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো। কিন্তু উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউ গাজিপুরের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ব্রি‘র এসিআইএআর প্রকল্পের প্রণোদনা সার, বীজ পেয়ে কৃষকরা উৎসায়ী হয়ে আউশ ধানের আবাদ করেছেন।
দাকোপে চাষ হয়েছে ৯০ বিঘা জমিতে। ৭৫ জন কৃষক এ আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ৫০ জন কষককে প্রণোদনা দেয়া হয়। আর বটিয়াঘাটায় চাষ হয়েছে ৪০০ সাড়ে ৮৭ বিঘা জমিতে। ৩৫০ জন কৃষক এ ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে প্রণোদনা পেয়েছেন ২৫০ জন কৃষক। দুটি উপজেলায় মোট ৫৮৫ জন কৃষক ব্রি ধান ৪৮ ও ৯৮ জাতের ধানের চাষ করেছেন। ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। সবে মাত্র আউশ ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ আবার ধান কাটা শেষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে বেশ খুশি মনে আমন রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমান অভাবের দিনে ভালো ফলন পেয়ে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন এসব কৃষকরা।
বটিয়াঘাটা এলাকার কৃষক কবির হোসেন খাঁ জানান, আগে আমন ধান ওঠার পর সব জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো। এবছর ধান গবেষনার শরিফুল ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রি ধান ৪৮ জাতের বীজ এবং সার নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে আউশের চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের ফলনও হয়েছে খুব ভালো। তিনি ধান কাটা শুরুও করেছেন। ৫০ শতকের বিঘা প্রতি ৩৫ তেকে ৪০ মন ধান পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। তবে অসময় পতিত জমিতে ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে তিনি খুব খুশি বলে জানান।
দাকোপের খলিসা এলাকার কৃষক মোজাফর হোসেন বলেন, তিনি ২ বিঘা জমিতে ব্রি ৪৮ ও ৯৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু ইঁদুরে উৎপাতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান। তবে ধান গবেষনার লোকজন বলেছেন জমি থেকে ধান কেটে দেওয়ার সঙে সঙে তারা প্রতি মন এক হাজার টাকা দরে কিনবে। এতে সে লাভবান হবেন।
এবিষয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এবছর বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ব্রি- ধান ৪৮ ও ৯৮ জাতের ধান চাষ বেশি করেছেন। আর সবচেয়ে ভাল ফলন হয়েছে ৪৮ ধানের।
এব্যাপারে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পলাশ কুমার কুন্ডু জানান, আউশ মৌসুমে পতিত জমিতে আউশ ধান চাষের জন্য দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ১৬০ জন কৃষকের মাঝে ৬৫০ কেজি ব্রি ধান ৯৮ ও ৪৮ জাতের বীজ, সার দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত খরা ও লবণাক্ততার কারণে অধিকাংশ কৃষকের ধানের চারা মারা যায়। তারপরও দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় ১৬ জন কৃষকের ৩৫ বিঘা জমি টিকে আছে এবং ফলনও হয়েছে খুব ভালো। ইতি মধ্যে বটিয়াঘাটায় প্রদর্শনীর নমুনা ফসল কর্তন উপলক্ষে মাঠ দিবস করা হয়েছে।
সেখানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউপি সদস্যসহ ১২০ জন কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন। এবছর ধানের ফলন দেখে আগামী বছর এ ধানের আবাদ আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করছেন।