বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫.৩০ মিনিটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এর সাথে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। উপাচার্য রাষ্ট্রদূতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় ইইউ রাষ্ট্রদূত উপাচার্যকে স্মারক উপহার দেন। উপাচার্যও তাঁকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট, সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকার ওপর প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ, প্রসপেক্টাস উপহার প্রদান করেন।
পরে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, গত ৩৩ বছর ধরে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ২০৪১ সালের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশ ও জাতির চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ ও যোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে চলছে। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশসমূহ এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যান। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এক্সচেঞ্জ, এমওইউ’র কথা উল্লেখ করেন উপাচার্য। বিভিন্ন দেশের সাথে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সুন্দরবন আমাদের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও এই উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ, বনজ ও মৎস্যসহ বিভিন্ন সম্পদ নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানামুখী গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশন্যাল এগ্রিকালচার রিসার্চ (এসিআইএআর) এর সাথে খুবির চলমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন উপাচার্য। এর মধ্যে ‘এসিআইএআর প্রজেক্ট বাংলাদেশ সুন্দরবন ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
উপাচার্য বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এপিএ র্যাংকিংয়ে এ বছর ৪র্থ অবস্থানে উঠে এসেছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আনন্দের বিষয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের ছাদে স্থাপিত সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলা প্রণয়ন, একই একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ, প্রতিবছর ৪-৫টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সবসময় উৎসাহিত ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিবছর ইউরোপে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং চলমান বিভিন্ন গবেষণাকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য ইইউ রাষ্ট্রদূতকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমনের পরামর্শ দেন।
সৌজন্য সাক্ষাতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদার, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুই চাকমা, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।