জোড়াসাঁকো থেকে শিলাইদহ, সাগরদাঁড়ি (গঙ্গা-পদ্মা) শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপাচার্য বলেন, আমি বাঙালি হিসেবে গর্বিত। ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে থাকলেও বাঙালিদের মধ্যে মনের টান সবসময় অটুট থাকে। ভারতের মাটিতে পা দিলে মনে হয়- এই সেই দেশ যারা আমাদের বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেসক্লাব কলকাতার ভূমিকাও ছিলো প্রশংসনীয়। এটা আমরা গভীরভাবে ধারণ করি। এটা আমাদের অন্তরের ভালবাসা। তিনি বলেন, পৃথিবীর যেখানে বাঙালি থাকুক, মনে হয় আপনজন। যারা একজনের বিপদে অন্যজন এগিয়ে আসে। আমাদের এই ভালবাসার মেলবন্ধন অটুট থাকুক এই প্রত্যাশা করি। একই সাথে বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রতিনিধি দলকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানাই।
তিনি আরও বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কোলাবরেটিভ রিসার্চ এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে আমরা আগ্রহী। ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের এমওইউ আছে, আরও এমওইউ করতে চাই। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখনীয় আছে। উচ্চশিক্ষায় এডমিশন টেস্ট নিয়ে সবার আগে উঠে আসে ভারতের কথা। এক্ষেত্রে আমরা তাদের অভিজ্ঞতা নিতে পারি।
উপাচার্য বলেন, আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। কোয়ালিটি মেইনটেন করে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যারাইটিস সাবজেক্ট রয়েছে। এখানে আইডিয়া এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে আমাদের।
তিনি বলেন, আমরা একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে কি করে এগিয়ে নিতে পারি, তার সুযোগ খুঁজতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে এমওইউ হতে পারে, কোলাবরেটিভ রিসার্চ এবং আইডিয়া এক্সচেঞ্জও হতে পররে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিন এবং ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এমওইউ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন উপাচার্য।
প্রতিনিধি দলের আহ্বায়ক সৌম্যব্রত দাশ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সাহিত্য, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক অনেক বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সবখানে ছড়িয়ে আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সব মহলে আস্থার জায়গা করে নিয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের মধ্যে একাডেমিক এক্সচেঞ্জ এবং কালচারাল এক্সচেঞ্জ হতে পারে। আমরা বাঙালি জাতিসত্ত্বার সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিতে চাই। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চাই।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর অশোক রঞ্জন ঠাকুর, জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির প্রফেসর অমিত শোভন রায়। সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রতিনিধি দলের সদস্য, প্রেসক্লাব কলকাতার প্রেসিডেন্ট স্নেহাসিস সূর।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলী, তাঁর স্ত্রী রুমা গাঙ্গুলী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঊষা ঠাকুর, সেন্ট্রাল এডমিন ট্রাইব্যুনাল মুম্বাইয়ের জজ (অবসরপ্রাপ্ত) চামেলি মজুমদার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক ড. দেবদূত ঘোষ ঠাকুর, বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজের প্রফেসর সুতপা ঘোষ ঠাকুর, কলকাতা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সাঙ্খায়ন চৌধুরী, রোটারি রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠের শিক্ষক জয়িতা বিশ্বাস, সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটি কলকাতার প্রফেসর সোমা সূর, ওয়েস্টবেঙ্গল মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড ফিন্যান্স কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ঈপ্সিতা দাস, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির পোস্ট গ্র্যাজুয়েট হিন্দোল দাস, চার্টার একাউন্ট্যান্ট দীপঙ্কর কাঞ্জিলাল, বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা কাঞ্জিলাল এবং খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মল্লিক সুধাংশু।
অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য প্রতিনিধি দলকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট ও সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম এর ওপর তাঁর লেখা বই উপহার প্রদান করেন। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকেও উপাচার্যকে ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়।