শেখ মাহতাব হোসেন:: চিংড়ি চাষ বিগত কয়েক দশক যাবৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক ভাবে চিংড়ি আমাদের দেশের রপ্তানি আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সম্পতি দেশে চিংড়ি উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। চিংড়ির উৎপাদন হ্রাসের নানাবিধ কারণ রয়েছে তবে রোগের কারণে চিংড়ির মড়ক উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণ।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, পানির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলী প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। প্যাথোজেনমুক্ত পোনা ও মানসম্মত খাদ্যের অভাবে, পানি সরবরাহের অব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো এবং অধিক ঘনত্বে বাগদা চিংড়ি চাষের ফলে জানা-অজানা বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রাদুর্ভাব চিংড়ি উৎপাদনকে ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ এবং চিংড়ি চাষ উন্নয়নে পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব এসব বিবিধ কারণে চিংড়ি চাষ দিনদিন মারাত্নক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অধিকন্তু, এ সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান ও এন্টিবায়োটিক চিংড়িচাষে ব্যবহার করা হচ্ছে যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য অনিরাপদ।
সুতরাং টেকসই চিংড়ি চাষ মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় চিংড়ি চাষের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য নিরাপদ ও জৈব পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ উদ্ভাবন করা একান্ত প্রয়োজন, যা চিংড়ি চাষকে ঝুঁকিমুক্ত ও টেকসই করতে সাহায্য করবে। এ প্রেক্ষিতে বর্তমান চাষ পদ্ধতির বিকল্প হতে পারে অ্যাকুয়ামিমিক্রি নামক একটি নতুন প্রযুক্তি যা সম্পূর্ণ জৈবিক, প্রাকৃতিক ও টেকসই চাষ পদ্ধতি হিসাবে সমাদৃত। বর্তমানে অ্যাকুয়ামিমিক্রি থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশে চিংড়ির রোগবালাই নিয়ন্ত্রন, চিংড়ির মৃত্যু হার কমানো ও চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সফল একটি পদ্ধতি হিসেবে ইতোমধ্যে পরিক্ষীত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ও পরীক্ষার উপর কোন গবেষণা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। এ প্রেক্ষিতে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (SCMFP), মৎস্য অধিদপ্তর (DoF) এর সহায়তায় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের ফিশারিজ বায়োলজি এন্ড অ্যাকুয়াটিক এনভায়রণমেন্ট বিভাগের কারিগরী ও গবেষণা সহযোগীতায় পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক অ্যাকুয়ামিমিক্রি পদ্ধতিটি চিংড়ি চাষে রোগনিয়ন্ত্রণ ও চিংড়ি উৎপাদনে কতটা কার্যকরী ভূমিকা পালনে সক্ষম সে লক্ষ্যে খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কুশোরহুলা এলাকায় চিংড়ি খামারে পরীক্ষামূলক চাষপদ্ধতির উপর গবষেণা সফল হয়েছে গবেষনায় দেখা গেছে প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে প্রতি কেজি চিংড়ি উৎপাদনে ১০০ টাকা কম খরচ হয়েছে। ৯ টি পুকুরে ২ ধাপে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। এখানে গবেষণা পুকুরে ৭০% খাবারের সাথে ৩০% সয়াবিন, অন্যটিতে ৭০% খাবারের সাথে ৩০% মোলাসেস প্রোয়োগ করা হয়। গবেষনায় দেখা যায় বিশেষ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চিংড়ি বাঁচার হার ৯০% ছিলো, কোন ধরনের রোগবালাই হয়নি, এফসিআর ১:১.০২ অর্থাৎ ১ কেজি ২০ গ্রাম খাবার খেয়ে ১ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। আজ শনিবার ডুমুরিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজিপুর এর ভাইচ চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো: গিয়াসউদ্দিন মিয়া গবেষনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রকল্পের পটভূমি উপস্হাপনা করেন প্রধান গবেষক প্রফেসর ড,এস এম রফিকুজ্জামান।
এ সময় মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগ এর উপ-পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: আনোয়ার হোসেন, খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল, সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের উপপ্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রী, ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুবকর সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।