অনলাইন ডেস্কঃদেশের সব বিশ্ববিদ্যলয়কে পেছনে ফেলে উদ্ভাবনী ক্যাটাগরিতে শীর্ষে উঠে এসেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্পেনের সিমাগো ল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস পরিচালিত জরিপে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে খুবি। বিশ্ববিদ্যলয়টির এ অনন্য অর্জনে আনন্দের বন্যা বইছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
প্রথম এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যায়ের সামগ্রিক অবস্থান ৭২১। এর মধ্যে, সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে অবস্থান ২৪২, গবেষণায় ৪৩২ ও উদ্ভাবনীতে ৪৪৯তম স্থানে। এছাড়া, ওই তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উদ্ভাবনী ক্যাটাগরিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান প্রথম, গবেষণায় দ্বিতীয় ও সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি, লবণ সহনশীল ফল গাছের জাত উদ্ভাবন, পাটভিত্তিক সিমেন্ট বন্ডেড পার্টিকেল বোর্ড, কৃষি ক্ষেত্রে নিরাপদে কীটনাশক বা বীজ ছিটানোর জন্য ড্রোন, গলদা ও রুইয়ের সঙ্গে মলা মাছ চাষের মতো বিভিন্ন উদ্ভাবন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের।
তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (গবেষণায় প্রথম), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, খুলনা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
উচ্চশিক্ষার প্রতি একনিষ্ঠ গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রভাব তিনটি বিষয়কে ভিত্তি ধরে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে স্পেনের সিমাগো ল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস। সিমাগো ইনস্টিটিউশনস র্যাংকিং (এসআইআর) নামে প্রকাশিত এ তালিকায় চলতি বছর বিশ্বের ৬ হাজার ৪৬১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম এক হাজারের জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এবারই বাংলাদেশের সর্বাধিক ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি হলো আইসিডিডিআরবি। সম্প্রতি, এ সংক্রান্ত র্যাংকিং আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক র্যাংকিং তালিকায় স্থান পাওয়ায় ও দেশের মধ্যে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করায় সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা, সরকারের অবিরাম সহায়তা ও ইউজিসির একান্ত প্রচেষ্টা এ অর্জনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণাকর্মে আন্তরিকতা ও নিরন্তর প্রচেষ্টা, শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা, অনুশীলন-অনুধাবনে অভিনিবেশ সাফল্য এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত এ সাফল্য সুসংহত করে সামনে আরও এগিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানান উপাচার্য।
এ অর্জন গত ৫-৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান বৃদ্ধির অব্যাহত প্রচেষ্টার সাফল্যের স্মারক বলে মনে করেন তিনি। পাশাপাশি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক র্যাংকিং তালিকায় থাকতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র রাজনীতিমুক্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি গেজেটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর।