শেখ মাহতাব হোসেন:; দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে চিংড়ির চাহিদা ও বাজারদর বেশি থাকায় চিংড়ি চাষ লাভজনক। চিংড়ির পোনা সহজলভ্য, অল্প বিনিয়োগেই চিংড়ির খামার গড়ে তোলা যায় এবং সারা বছর চিংড়ি চাষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫০ কেজি থেকে ১০০০ কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। আমাদের দেশে মাছ রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭৮ ভাগ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ির চাষ করে চাষির আয় ও কর্মসংস্থান বর্তমানের চেয়ে আরো ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা মৌজায় বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোসাটাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় ২৫ জন চিংড়ি চাষী একত্র হয়ে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। ক্লাস্টারের আওতায় ২৫ জন চিংড়ি চাষী চলতি বছরে গলদা চিংড়ি চাষ করে বেশি মুনাফা পাওয়ায় এবার বোরো ধান করতে চাচ্ছেন না।
ডুমুরিয়ার টিপনা চিংড়ি চাষের ক্লাস্টারের সভাপতি শেখ মাহাতাব হোসেন জানান, সে বিগত ২৫ বছর যাবত চিংড়ি মাছের ঘের করে আসছেন। বর্তমান সরকারের আমলে মেরিন ফিশারিজের প্রকল্পের আওতায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন,সে কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধান করতে অনিচ্ছুক। তিনি জানান ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে ধানের চেয়ে তিনগুণ বেশি লাভ পেয়েছেন।
এছাড়া টিপনা নতুন রাস্তা চিংড়ি চাষী ক্লাসটারের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরহাদ হোসেন সরদার জানান আমি বহুদিন ধরে চিংড়ি মাছের চাষ করেছি কিন্তু সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে অল্প জমিতে অধিক মুনাফা পেয়েছি। ধানের চাষ না করে আগাম চিংড়ি মাছের চাষ করলে আমাদের অনেক টাকা মুনাফা পারেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায় গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রথমে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। অধিক লাভজনক শিল্প হিসেবে চিংড়ি সম্পদ জনসাধারণের কাছে বিবেচিত হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে চিংড়ির চাষ খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও যশোর অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তার লাভ করে।
বিগত ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ি চাষে মোট জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫১.৮১ হাজার হেক্টর এবং হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ছিল প্রায় ৮৫ কেজি/উৎপাদন চক্র। পঞ্চাশ দশকের দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বাদুপানিতে গলদা চিংড়ির চাষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শুরু হলেও আমাদের দেশে শুরু হয় সত্তর দশকের শেষ দিকে।
এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে জাপান, হাওয়াই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানে গলদা চিংড়ি চাষের উপর উল্লেখযোগ্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের পূর্বে গলদা চিংড়ির চাষের কোনো স্বতন্ত্র এলাকা ছিল না বললেই চলে এবং বাগদা চিংড়ি মাত্র আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হত।
এ সময় গলদা চিংড়ির গড় উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ১০০ কেজি। বাংলাদেশে সমগ্র উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে চিংড়ি চাষ ব্যাপক প্রসার লাভ করে মূলত আশি থেকে নব্বই দশকের দিকে। বর্তমানে বেশিরভাগ খামারে সনাতন পদ্ধতি পরিহার করে অনেকটা উন্নত চাষ প্রযুক্তির মাধ্যমে চিংড়ি চাষাবাদ হচ্ছে। আগামীতে চিংড়ি চাষে বেশী মুনাফা পাওয়ায় কারণে চিংড়ি চাষিরা বোরো ধান বাদ দিয়ে চিংড়ি চাষের দিকে ঝুকবেন।