ইমদাদুল হক:: এবার পাইকগাছার লবণাক্ত এলাকায় হাইব্রিড মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। পলিমালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক মলয় মন্ডল। প্রথম পর্যায়ে মরিচ চাষ করে লাভবান হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় একবিঘা জমিতে মরিচ সুপার চাষ করেছেন কৃষক মলয়।
মলয় মন্ডল (২৯) উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের হোগলারচক গ্রামের কালিপদ মন্ডলের ছেলে। স্নাতক পাস করে চাকুরির পিছনে সময় অপচয় না করে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন মলয়। বাজারে মরিচের অধিক মূল্যের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন মরিচ চাষ করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২২ সালে ঘোষখালী নদীর ধারে ১২ কাঠা জমিতে মরিচের চাষ করেন। এতে তার ব্যয় হয় ৯৭ হাজার টাকা এবং বিক্রয় হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অধিক লাভ দেখে মলয় সিদ্ধান্ত নেয় মরিচ চাষ বৃদ্ধি করার। সে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পলিমালচিং পদ্ধতিতে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর এক বিঘা জমিতে মরিচ সুপার হাইব্রিড জাতের মরিচের চারা রোপন করে। এ চারা সে নিজেই ট্রেতে উৎপাদন করে। সাধারণ চাষের চেয়ে পলিমালচিং পদ্ধতি অধিক লাভ জনক।
এ পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। অতিরিক্ত সেচ লাগে না, আগাছা জন্মাতে পারে না, লবণাক্ততা কম থাকে, রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়, শ্রমিক খরচ কম লাগে, বেকারত্ব দূর হয়, ফলন বেশি হয় এবং একটি মালচিং ৩ বছর ব্যবহার করা যায়। এ সব সুবিধার কথা চিন্তা করে মলয় পলিমালচিং পদ্ধতিতে মরিচের চাষ করেছে। বর্তমানে তার ক্ষেত জুড়ে প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণ মরিচ ধরেছে। ইতোমধ্যে সে মরিচ ওঠানো এবং বিক্রয় করা শুরু করেছে। এ হাইব্রিড জাতের ফলন শুরু হওয়ার পর থেকে ৬ থেকে ৭ মাস ভালো ফলন দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান সহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও আকরাম হোসেন। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে বাম্পার উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষক মলয় মন্ডল। ১ বিঘা জমিতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে এবং ৬ লাখ টাকার অধিক বিক্রয় হবে বলে আশা করছেন মলয় মন্ডল।
কৃষক মলয়কে অনুসরণ করে এলাকার অনেকেই পলিমালচিং পদ্ধতির মরিচ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাশ।
কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, দেশের সবকিছুই এখন আধুনিক এবং স্মার্ট হচ্ছে। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা মলয় মন্ডলের মতো স্মার্ট কৃষি চাষাবাদে এগিয়ে আসলে দেশের বেকারত্ব অনেকাংশে কমে আসবে। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। কৃষি চাষাবাদ কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তিকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন এ কর্মকর্তা জানান। উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমেই লবণপানির চিংড়ি ঘেরে সরিষার আবাদ করে সফল হয়েছেন মালথ গ্রামের কৃষক মো: হারুন। লবণাক্ত এলাকায় এ ধরণের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় সংসদ সদস্য।