‘বাংলাদেশে কোভিড-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া: স্বাস্থ্য, সমতা এবং উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনার বুধবার (৬ মার্চ) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯.৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সামাজিক বিজ্ঞান স্কুল আয়োজিত এ সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর উপাচার্য প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী এমন একটি বিপর্যয় যা আমাদের জীবনযাত্রাকে থমকে দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব মানবতাকে নাড়া দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে যখন আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই মহামারীটি বাংলাদেশে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে। ওই সময়ের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমরা লড়াই করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও প্রদান করা হয়েছিল। মহামারীর ওই সময়ে ক্ষুধার কারণে বাংলাদেশে একটিও প্রাণ হারায়নি। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ছিল স্থিতিশীল।
তিনি আরও বলেন, ন্যায্যতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নটি সর্বদা উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যে কোনো ধরনের উন্নয়নই অর্থহীন হয়ে পড়ে, যদি তার ফল সমাজের সকল সম্প্রদায়ের কাছে সহজলভ্য না হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। কোডিভ মহামারী আনুষ্ঠানিকভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলার সাথে সাথে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোকে মূল্যায়ন করা। এর প্রধান ফোকাসের একটিতে রয়েছে- সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
জবি উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নের প্রশংসা করেন। একই সাথে সামাজিক বিজ্ঞান স্কুল এমন একটি সমসাময়িক এবং সমাজতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় সেমিনার আয়োজন করায় আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদা জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। তিনি আরও বলেন, কোভিড আমাদের থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিলেও অনেক কিছু দিয়েছি। বিশেষ করে ভ্যাক্সিনেশন, ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টস্ উল্লেখযোগ্য। কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এমন একটি সেমিনার সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ সেমিনারের দুই রিসোর্স পারসন এবং দেশি-বিদেশি ডেলিগেটদের উপস্থিতি অংশগ্রহণকারী তরুণ গবেষকদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদানে বিষ্ময়কর সাফল্য পেয়েছে। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হতে আমাদের যা প্রয়োজন; ড্রোন টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টস, মেশিন লার্নিং এসব কিছু এখন চোখের সামনে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতির প্রশংসা করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন ও সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আবুসাঈদ খান। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সেলিনা আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেমিনার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. খান মেহেদী হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার চন্দ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা তাসনিম পিংকি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট স্কুলভুক্ত ডিসিপ্লিনসমূহের শিক্ষকবৃন্দ, অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের শিক্ষক-গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে ‘বাংলাদেশে কোভিড-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া: স্বাস্থ্য, সমতা এবং উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারের অগ্রগতি’ বিষয়ে ৬১টি গবেষণা নিবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেমিনার শুরু হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ফুল ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রিসোর্স পারসন হিসেবে টেকনিক্যাল সেশন পরিচালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন।