‘মালিক-শ্রমিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, চেক বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে বুধবার (১ মে) খুলনায় মহান মে দিবস পালিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে খুলনা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো শ্রমিকরা। সকল সেক্টরে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশের অনেক মিল-কলকারখানাগুলো জাতীয়করণ করেন।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় এই অঞ্চলের জুটমিলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কোন মিল বন্ধ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ক্ষতি হয়, এমন কোন কাজ করেনি। সরকার শ্রমিকদের কল্যাণ ও তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে শ্রম আইন প্রণয়ন করেছে। কর্মক্ষেত্রে যাতে কোন ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে মালিক-শ্রমিক উভয়কে সচেতন থাকতে হবে। বর্তমানে খুলনা অঞ্চলে কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। সততা ও নিষ্ঠার সাথে সকলকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে মেয়র সকলের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ হাসানুজ্জামান, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আয়েফীন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। স্বাগত বক্ততৃা করেন বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ ফরহাদ আহমেদ আকন্দ ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শেখ আব্দুল বাকী। শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির বক্তৃতা করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম জাফর ও মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রণজিত কুমার ঘোষ। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির। জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তর যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, খুলনা শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক এপর্যন্ত জেলার প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত, দুস্থ, মাতৃত্ব কল্যাণ, অসহায় ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা এবং সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে ৩৪০৮ জন সুবিধাভোগীর মাঝে প্রায় ১২ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মেয়র খুলনা জেলার প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা এবং সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে বরাদ্দকৃত ২৫জন সুবিধাভোগীর মাঝে ১৫ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে এর আগে মেয়রের নেতৃত্বে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র্যালিতে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শ্রমিক-মালিক-কর্মচারী, ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।