সেতু বিভাগের সাবেক সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর হায়েস্ট লেভেলের মনিটরিং ও সুপারভিশন করা হয়েছে পদ্মা সেতুতে। আমরা ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রাক ল ফিডিক রুলস ফলো করেছি এখানে। ফিডিক রুলের মূল কথা হচ্ছে, কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। যার ফলে কন্টাক্টররাও সেইফ থাকে, আমরাও সেইফ থাকি।
তিনি বলেন, ফিডিক রুলসের অনেকগুলো আইটেম আছে। আমরা ফলো করেছি ফিডিক গোল্ড। ফিডিক গোল্ডের এক নম্বর কন্ডিশন হলো হায়েস্ট লেভেলের একজন কনসালটেন্টের অ্যাপয়েন্ট নিতে হবে। ওরিয়ান এক্সপ্রেস কর্পোরেশন আমাদের কনসালটেন্ট ছিল। এই কনসালটেন্টকে ব্যালেন্স করার জন্য আমাদের ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট কনসালট্যান্ট নিতে হয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে সেতু বিভাগ আয়োজিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা সেতু নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হয়েছে, সেটা কাউকে বোঝাতে পারিনি। কেউ কিছুই বুঝতে চেষ্টা করেননি। আমরা ইকোনমিক অ্যানালাইসিস দিলাম, প্রেসে বললাম, সবাইকে সবাইকে বললাম। কিন্তু কাউকেই বোঝাতে পারিনি। আমরা যে এনালাইসিস দিলাম আইআরআর, ইআরআর, এফআরআর, বেনিফিট কস্ট রেশিও, লজিকাল ফ্রেমওয়ার্ক, এনপিভি, রিপেমেন্ট শিডিউল— প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক মাস থেকে দেড় মাস আমার সঙ্গে এটা নিয়ে বসেছেন। এবং এই গ্রামার, ম্যাথমেটিক সবাইকে বুঝাতে বলেছেন।
তিনি জানান, এক দেড় মাস পর তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সবাইকে ডাকলেন। আমরা দেখালাম, যদি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ফান্ডিংয়ে আমরা প্রজেক্টটা ইমপ্লিমেন্ট করি তাহলে ১.৫ হবে প্রফিট, যদি মালয়েশিয়ার সাথে করি তবে ২.৫, যদি আমরা নিজের পয়সা করি তাহলে আমাদের প্রফিট হবে ৪.৫। আমরা যে রিপেমেন্ট শিডিউল দেখেছিলাম, এখন গত দুই বছর আমরা যে টাকা পেয়ে করেছি, আমাদের হিসাব ছিল ২৫ বছরে গিয়ে এই টাকা শোধ হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ বছরে টাকা উঠে আসবে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সতর্কতা জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পরও আমাদের কিন্তু কিছু দায়িত্ব রয়ে গেল। জাজিরা পাড় ডিপলি ডেঞ্জারাস। মাঝির ঘাট থেকে কেওড়াকান্দি পর্যন্ত এই ১৪ কিলোমিটারে কোনও ড্রেজিং করা যাবে না। ড্রেজিং করলে নিচ দিয়ে স্কাউরি হয়ে বাঁধের নিচ দিয়ে গিয়ে একেবারে ভেঙে ফেলবে। ব্যাংক যেটা হয়েছে, সেই ব্যাংকের ২০০ মিটারের মধ্যে কোন হেব্বি কন্সট্রাকশন করা যাবে না এবং হেভি ট্রাফিক মোমেন্টকেও এলাও করা যাবে না। এই দুইটার যেকোনও একটা যদি ভায়োলেশন হয় কন্টাক্টার ও কনসালটেন্ট আমাদের যে ডিজাইন গ্যারান্টি দিয়েছে, সেটা তারা তুলে নেবে। সুতরাং আমরা সবাই মিলে জিনিসটা করে দিয়ে গেলাম। কিন্তু সবার উপরেই এই দায়িত্বটা রয়ে গেল।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের মো. মনজুর হোসেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামসহ অনেকে।