অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসিফ নজরুল বলেছেন, ছাত্র-জনতার একটি স্ট্যাটাস দেখেছি আমি। সেখানে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কোনও আলোচনা না করেই ফুল কোর্ট মিটিং আহ্বান করেছেন। মনে করা হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারের পরাজিত যে শক্তি তাদের পক্ষের একটি মুখ।
শনিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, এখনও সুপ্রিম কোর্টে যে প্রধান বিচারপতি রয়েছেন তিনি একটি ফুলকোর্ট মিটিং ডেকেছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্র-জনতার একটি স্ট্যাটাস দেখেছি আমি। সেখানে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কোনও আলোচনা না করেই ফুল কোর্ট মিটিং আহ্বান করেছেন। মনে করা হচ্ছে, স্বৈরাচারী সরকারের পরাজিত যে শক্তি তাদের পক্ষের একটি মুখ। আমাদের প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। কিন্তু তার কিছু ব্যাপারে তো অবশ্যই প্রশ্ন ছিল। বিশেষ করে যখন এই আন্দোলনটি হচ্ছিল তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন যে, আন্দোলন করে কি রায় পরিবর্তন করা যায় কি না? এটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় ছিল খুব দুঃখজনক। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর ছাত্রলীগের কাছ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা নিয়েছিলেন তিনি। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। এটা খুব ভালো একটা ইম্প্রেশন দেয় না। ডিবির প্রধান হারুনকে নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। প্রধান বিচারপতি তার কাছ থেকেও স্বর্ণের তরবারি উপহার নিয়েছিলেন।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ ইস্যুতে তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে এতদিন ক্ষমতায় থাকা শক্তিশালী নির্মম সরকারের প্রধানকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ওই রকম একটা জায়গা থেকে চাপ আসা বা প্রত্যাশা ব্যক্ত করার পর প্রধান বিচারপতির কী করা উচিত সেটা তার ওপরই ছেড়ে দিলাম।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গণ আন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটাকে কতটুকু সম্মান করতে হয় সেটা আমাদের প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে আমার প্রত্যাশা থাকবে।
আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে এটা ছাত্র-জনতার বিপ্লব। এই আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্রের প্রাণ ঝরেছে। এই আন্দোলনে আমরা এখনও যখন আবু সাইদ, মুগ্ধ, ফাইয়াজ বা ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের কথা শুনি বা পড়ি এখনও আমরা খুবই আবেগ আপ্লুত হয়ে যাই। এই আবেগকে নেতৃত্ব দিচ্ছে আমাদের সমন্বয়করা।
এই উপদেষ্টা আরও বলেন, হারুন এই আন্দোলনে আমাদের ছাত্রদেরকে আটকে রেখে নির্যাতনের মূল ব্যক্তি ছিলেন। প্রধান বিচারপতি যখন ডিবি প্রধানের কাছ থেকে সোনার তরবারি উপহার নিয়েছিলেন আমার তখন খুব অবাক লেগেছিলো। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিদেশে গেলে তার (প্রধান বিচারপতির) বাসায় থাকেন। এসব বিষয়ে তো তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। আন্দোলন চলাকালে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, এতো কীসের আন্দোলন। ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। আজকে বোধহয় সেটা আবারও বলা হয়েছে, যেহেতু তিনি ফুলকোর্টের মিটিং ডেকেছেন।
এটা একটা অনভিপ্রেত ঘটনা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেই ভালো। আমরা মনে করি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের মানবাধিকার রক্ষণের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। ছাত্র জনতার যে গণ আন্দোলন বা গণ অভ্যুত্থান এটার বিপরীতে কাউকে দাঁড় করানো উচিত না। আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন দেশের পুলিশ বাহিনীকে ছাত্র জনতার মুখোমুখি করার পরিণাম কি হয়েছে। এমন কিছু হোক আমরা কখনোই চাই না। আমরা আশা করি, সবার যেন শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। ছাত্র-জনতার যে গণ আন্দোলন হয়েছে এটার আকাঙ্ক্ষার প্রতি যেন আমরা সম্মান জানাই।