প্রান্ত বিশ্বাস :: এবারের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুবাইয়ে। ১৩ দিন ব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বহু বছর পর মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিতীয় বারের মতো এ রকম বড় কোনো সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এর আগে কাতারে ২০১২ সালের জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ১৪০টির বেশি দেশের রাজা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরা শুক্রবার এবং শনিবার দুবাই কমপ্লেক্সে ভাষণ দেবেন। জলবায়ু ইস্যুর সঙ্গে এবারের সম্মেলনে জলবায়ু সংকটের পাশাপাশি গাজার সংঘাতের এজেন্ডাও থাকবে। এবারের সম্মেলনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত দুর্বল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তহবিল চালু করতে সম্মত হয়েছেন সম্মেলনের নেতারা।
প্রতিনিধিরা জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ থেকে শুরু করে দীর্ঘ জলবায়ু আলোচনার বিষয়সমূহ নিয়ে আগামী দুই সপ্তাহ আলোচনা করবেন। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখার এজেন্ডার পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে আলোচনায় থাকবে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব। শুরুর দিনেই দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করাকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তারা। দরিদ্র দেশের জন্য জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট সুলতান আল-জাবের বলেন, দুবাইয়ের এই পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে একটি ইতিবাচক সংকেত।সম্মেলনের শুরুতেই জাতিসংঘপ্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৩ সাল বিশ্বের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য পূরণ হবে না।
জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তফবিলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ১ হাজার লাখ ডলার, জার্মানি ১ হাজার লাখ ডলার, ব্রিটেন কমপক্ষে ৫১০ লাখ ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৭৫ লাখ ডলার এবং জাপান ১০০ লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এদিকে, হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি কূটনৈতিক চাপের জন্য হারজোগ কপ-২৮ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসেরও ভাষণ দেওয়ার কথা থাকলেরও তার কার্যালয় বলেছে, তিনি আর সম্মেলনে যাচ্ছেন না। তার পরিবর্তে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুবাই যাবেন। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তিনি তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমিরাতি প্রতিপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন যেন জিম্মিদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের গতি বাড়ানো যায়। এবার কপ-২৮ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের বিষয়ে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার বলেছেন, সংঘাতের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং এটি চালিয়ে যাওয়া উচিত।
জলবায়ু সংকট থেকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ : জলবায়ু সংকট থেকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, যা থাকছে কপ-২৮ আলোচনায় এবারের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুবাইতে। এবারের সম্মেলনে শুরুতেই ইতিবাচক কিছু দেখা গেছে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত দুর্বল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তহবিল চালু করতে সম্মত হয়েছেন সম্মেলনের নেতারা। প্রতিনিধিরা জীবাশ্ম জ্বালানীর ভবিষ্যত থেকে শুরু করে দীর্ঘ জলবায়ু আলোচনার বিষয়সমূহ নিয়ে আগামী দুই সপ্তাহ আলোচনা করেন। সম্মেলনের শুরুতেই জাতিসংঘ প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৩ সাল বিশ্বের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য পূরণ হবে না।
কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি আরব আমিরাতের সুলতান আল জাবের বলেছেন, ‘এখন আসল কাজ শুরু হবে। আমি নিজেই আমার হাতা গুটিয়ে নেব, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করব এবং বাস্তব, কার্যকরী ফলাফলে ভূমিকা রাখব।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় তেল সংস্থা অ্যাডনকের প্রধান জাবের বলেছিলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ভূমিকা’ অবশ্যই জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কর্মীরা জলবায়ুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এবং জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে বিকল্প উপায় খোঁজা, এ দুটি বিষয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের তিন চতুর্থাংশের জন্য দায়ী এই জ্বালানি৷
১৪০টির বেশি দেশের রাজা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরা গতকাল শুক্রবার এবং আজ শনিবার দুবাই কমপ্লেক্সে ভাষণ দেবেন। ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের মাধ্যমে ভাষণ শুরু হবে। তারপর ব্রাজিল, কেনিয়া, টোঙ্গা ও ইউক্রেনের মতো দেশের নেতারা ভাষণ দেবেন। তবে এবারের সম্মেলনে জলবায়ু সংকটের পাশাপাশি গাজার সংঘাতের অ্যাজেন্ডাও থাকবে।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজোগ বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিপক্ষ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং শুক্রবার কপ-২৮ সম্মেলনে ভাষণ দেবেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসেরও ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার কার্যালয় এএফপিকে বলেছে, তিনি আর সম্মেলনে যাচ্ছেন না। তার পরিবর্তে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুবাই যাবেন।হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি কূটনৈতিক চাপের জন্য হারজোগ কপ-২৮ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তিনি তার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমিরাতি প্রতিপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন যেন জিম্মিদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রচার ও গতি বাড়ানো যায়। এবার কপ-২৮ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষের বিষয়ে আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে।
জলবায়ু দুর্যোগ তহবিলের অনুমোদন: দুবাইতে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা একটি জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল অনুমোদন করেছে। যার মাধ্যমে খরা, বন্যা ও ক্রমবর্ধমান সমুদ্রের পানির প্রভাব মোকাবেলায় দুর্বল দেশগুলোকে সহায়তা করা হবে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সম্মেলনটির উদ্বোধন করা হয়। এ চুক্তিটি ২০২৩ সালের কপ-২৮ সম্মেলনের একটি ইতিবাচক সংকেত বলে মন্তব্য করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুলতান আল-জাবের।
আল-জাবের সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্পমন্ত্রী ও দেশটির জাতীয় জ্বালানি তেল কোম্পানির প্রধান। তিনি এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছেন। তার প্রধান ভূমিকা নিয়ে সমালোচকরা নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। তাদের ধারণা তার জ্বালানি তেলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাকে জলবায়ু পদে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।
আল-জাবের বলেন, বিশ্বকে অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলোকে নির্গমন বন্ধ করার জন্য সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত করতে হবে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্য কার্বন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সাইমন স্টিয়েল জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির যুগকে পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এ সম্মেলনে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। দুই সপ্তাহ-ব্যাপী অনুষ্ঠানটিকে সর্বকালের বৃহত্তম জলবায়ু সমাবেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ফ্রান্স, জাপান, যুক্তরাজ্য, মিশর, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান ও ব্রাজিলের রাষ্ট্রপ্রধানসহ কয়েক ডজন বিশ্বনেতা রয়েছেন।
কপ-২৮ সম্মেলনে জি৭, জি-২০ আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে: জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)-২৮ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। তবে জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় বৈশ্বিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তহবিলের সুষ্ঠ বন্টনের প্রত্যাশায় থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো।
দুবাইয়ের এক্সপ্রো সিটিতে থেকে শুরু হয় কপের ২৮তম সম্মেলন। ১৩ দিন ব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়ার কোন রাষ্ট্রপ্রধান এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ব্রিটেনের রাজা চার্লস সম্মেলনে অংশ নেবেন।
সম্মেলনের প্রথম দিনেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে তহবিল গঠন করেছেন প্রতিনিধিরা। যদিও এ তহবিলে কোন দেশ কী পরিমাণ অনুদান দিবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে কপ-২৮ সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জার্মানি ১০ কোটি ডলার, ব্রিটেন ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং জাপান ১ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য জলবায়ু বিপর্যয় তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কপ-২৮ এর প্রেসিডেন্ট সুলতান আল-জাবের বলেন, দুবাইয়ের এই পদক্ষেপ বিশ্বের কাছে একটি ইতিবাচক সংকেত। চলতি বছর কপ-২৮ সম্মেলনের আগে জাতিসংঘের ক্লাইমেট অ্যাম্বিশন সামিটের পাশাপাশি জি৭, জি২০-তে বেশ কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনেই জলবায়ু সংকট আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পেয়েছে। জলবায়ু পরির্বতের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী চীন-যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতেও বিষয়টি উঠে এসেছে। ফলে এবারের সম্মেলনে ভাল কিছু হওয়ার প্রত্যাশা করছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো।
প্রসঙ্গত, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রশ্নটি অনেক দিন ধরেই একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে ছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকদিন ধরেই বলে আসছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের দায় খুবই সামান্য। কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, এবং সে কারণেই তারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য আরো বেশি অর্থ চায়। সে ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলার খরচ মেটানোর বিষয়টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
এদিকে এতদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায় বড় বিষয় হয়েছিল কীভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো যায়, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায়। তবে তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে, এই সমস্যার প্রধান কারণই তো শিল্পোন্নত দেশগুলো, কিন্তু এর পরিণামে যে দেশগুলোকে সবচেয়ে প্রত্যক্ষভাবে ভুগতে হবে তারা হচ্ছে দরিদ্রতর উন্নয়নশীল দেশগুলো। তাই শিল্পোন্নত দেশগুলোর উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাধারনত ঘন ঘন বন্যা, খরা, সামুদ্রিক ঝড়, ভূমিধস এবং দাবানলের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এগুলোর শিকার হচ্ছে তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে এর মোকাবিলায় তাদের অর্থ দরকার। এর আওতায় যেমন বাড়িঘর, জমি, খামার, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির মত অর্থনৈতিক ক্ষতি পড়বে, তেমনি পড়বে অন্যান্য ক্ষতিও যেমন মানুষের মৃত্যু, সাংস্কৃতিক এলাকা বা প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসের মত বিষয়গুলোও।
এদিকে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এছাড়াও বৈশ্বিক পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
জলবায়ু সংকট কার্যত শিশু অধিকারের সংকট: শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) প্রবর্তন” শীর্ষক প্রতিবেদনের এই সূচকটি ইউনিসেফের প্রথম শিশু-কেন্দ্রিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক। শিশুদের ঘূর্ণিঝড় ও তাপপ্রবাহের মতো জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে দেশগুলোকে ক্রমানুসারে স্থান দেওয়া হয়েছে। যেখানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভারত – দক্ষিণ এশিয়ার এই চার দেশে শিশুরা জলবায়ু সংকটের প্রভাবসমূহের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এই চার দেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৪, ১৫, ১৫ ও ২৬ নম্বরে। নেপালের অবস্থান ৫১, শ্রীলঙ্কা আছে ৬১তম স্থানে। ভুটান আছে ১১১তম অবস্থানে, যেখানে শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া প্রায় ১০০ কোটি শিশু “অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করা ৩৩টি দেশে বসবাস করে করে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।