ইতিহাসে লেখা থাকবে কানপুর টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম দিনে জিতেছে ভারত। কিন্তু ওভারের হিসাব করলে ভারত জিতেছে ২ দিনের মধ্যেই!
প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে খেলা হয়েছিল মাত্র ৩৫ ওভার। দ্বিতীয় দিন টানা বৃষ্টি আর তৃতীয় দিন মাঠ ভেজা থাকায় একটি বলও হয়নি। চতুর্থ দিন খেলা হয়েছে ৮৫ ওভার। আর পঞ্চম ও শেষ দিন ৫৩.২ ওভার। মানে, ১৭৩.২ ওভারেই ম্যাচ শেষ! অথচ টেস্টে পুরো ২ দিন খেলা হলে ন্যূনতম ১৮০ ওভার তো হতোই।
বাংলাদেশকে এভাবে কুপোকাত করতে কানপুর টেস্টে কী কী কৌশল নিয়েছিল ভারত, সেটা বিস্তারিত জানিয়েছেন দলটির অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
এত স্বল্প দৈর্ঘ্যের টেস্ট ম্যাচ নিশ্চিত ড্র হবে—বেশির ভাগ মানুষ এমনই ধরে নিয়েছিলেন। চেন্নাই টেস্টে হেরে সিরিজে ১–০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশেরও লক্ষ্য ছিল বৃষ্টি আর ভেজা মাঠের আশীর্বাদ নিয়ে ভারতের সঙ্গে ৯ বছর পর কোনো টেস্ট ড্র করা।
কিন্তু প্রকৃতিকে পাশে পেয়েও কানপুরে হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, জিততে হবে’—ভারতীয় দলের এই দৃঢ় সংকল্পই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করতে সাহায্য করেছে। এই সিরিজ জয় ভারতকে টানা তৃতীয় চক্রে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
কানপুরে ভারতের প্রথম ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী ব্যাটিং অনেকের মনে বিস্ময় জাগিয়েছে। রোহিত শর্মার দলের ওই ইনিংস আধুনিক টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া ‘বাজবল’কেও হার মানিয়েছে। ওভারপ্রতি ৮.২২ করে রান তুলে টেস্ট ইতিহাসে পূর্ণাঙ্গ ইনিংসের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ভারত। একই সঙ্গে টেস্টের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ ও ২৫০ রানের রেকর্ড ভেঙে দেয়, যার শুরুটা হয়েছিল রোহিতকে দিয়েই।
ভারতীয় অধিনায়ক মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলেই মারেন ছক্কা। তাঁর উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী যশস্বী জয়সোয়াল, পরে শুবমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, এমনকি টেলএন্ডার আকাশ দীপও ব্যাট হাতে মারমুখী হয়ে ওঠেন।
তবে রোহিত শুধু ব্যাটসম্যানদের নয়; কানপুর টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বোলার ও ফিল্ডারদেরও। তাঁর আশা, বাংলাদেশের বিপক্ষে অসাধারণ এই সিরিজ মানুষের অনেক দিন মনে থাকবে।
ডট টিভিকে রোহিত বলেছেন, ‘আগে বোলাররা নিজেদের কাজ করেছে। তারা প্রয়োজনীয় উইকেটগুলো এনে দিয়েছে। এরপর আমরা (ব্যাটসম্যানরা) কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছি। জানতাম, এভাবে খেললে ম্যাচের ফল যেকোনো দিকে যেতে পারে। নেমেই মেরে খেলার সিদ্ধান্ত নিতে কোচ (গৌতম গম্ভীর) ও খেলোয়াড়দের যথেষ্ট সাহসী মানসিকতা দেখাতে হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আমরা ড্রেসিংরুমেই নিয়েছিলাম। এটা কাজে না দিলে সবাই আমাদের সমালোচনা করত।’
রোহিত আরও বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল পরিষ্কার—ম্যাচে ফল নিয়ে আসা। যেভাবে তা হতে পারত, দলের সবাই সেভাবেই করেছে। আমার মনে হয় এটা একটা অসাধারণ সিরিজ ছিল। সিরিজটা অনেকেরই নজর এড়িয়ে যেতে পারত।’
দলের ফিল্ডারদেরও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন রোহিত। বিশেষ করে স্লিপে সতীর্থদের ক্যাচিং–দক্ষতা তাঁকে মুগ্ধ করেছে, ‘আমাকে এইমাত্র জানানো হয়েছে, সিরিজে ২৪ ক্যাচের মধ্যে ২৩টিই আমরা নিতে পেরেছি। এটা খুবই ভালো ব্যাপার, বিশেষ করে স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারদের জন্য। স্লিপে এতগুলো ক্যাচ যাচ্ছে, ভারতে খেলা হলে এমনটা প্রতিনিয়ত দেখা যায় না।’
এতগুলো ক্যাচ কোন কৌশল ব্যবহার করে ফিল্ডাররা নিয়েছিল, সেটাও জানিয়েছেন রোহিত, ‘উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো ফিল্ডাররা যথেষ্ট প্রখর ছিল। টেলিভিশনে এই ক্যাচগুলো দেখলে সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, কাজটা সহজ নয়। কারণ, ফিল্ডাররা সাধারণত যেখানে দাঁড়ায়, সেখান থেকে অনেক সামনে দাঁড়িয়েছিল। রিঅ্যাকশন টাইম (বল ব্যাটে লাগার পর ফিল্ডারের হাত যাওয়ার সময় পর্যন্ত) খুব অল্প ছিল।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর টি–টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নামবে ভারত। তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি আগামী রোববার গোয়ালিয়রে। গত জুনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এই সংস্করণকে বিদায় বলায় স্বাভাবিকভাবেই ২০ ওভারের সিরিজে থাকছেন না রোহিত। তবে খুব বেশি দিন তাঁর বিশ্রামে থাকার সুযোগ নেই। ১৬ অক্টোবর থেকেই যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে ভারত।