চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃতের বছর আগের কমিটি দিয়েই চলছে খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রম। জেলার নয় উপজেলার মধ্যে রূপসা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ছাড়া বাকি সাত উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে প্রত্যেকটি কমিটির। আর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। এদিকে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সম্মেলন ছাড়াই তিন বছর মেয়াদে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৫ সালে এই কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ৫১ জন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুন করে সম্মেলন হয়নি। এরই মধ্যে এ আহ্বায়ক কমিটির তিন যুগ্ম-আহ্বায়কের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মালিক ছরোয়ার উদ্দিন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন কোনমতে জেলা কমিটির হাল ধরে রেখেছেন। মালিক ছরোয়ার উদ্দিন জেলা আ’লীগের সদস্য পদে রয়েছেন। এ দিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন দল করেও মূল্যায়ন পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে অনেকে দূরে সরে আছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা দলের সাথে জড়িত এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন শ্রমও দিয়েছেন তাদেরকে আজ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না এমনও অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে রূপসা এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড অনেক বেশি। কারণ এ দু’টি উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। ফলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখা যায় দলীয় সংবাদ। বাকি সাতটি উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকায় সাংগঠনিক কর্মকান্ড চলছে ধীরে গতিতে। এসব উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সাংগঠনিক গতিশীলতা আরও বেগবান হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের একাধিক নেতা। এছাড়া দাকোপের চালনা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।
রূপসা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা রুহুল আমিন রবি বলেন, উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে এবং পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডে অধিকাংশ ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে।’ বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বটিয়াঘাটা উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে জলমা ইউনিয়নে শুধুমাত্র আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তিনি বলেন, সাতটি ইউনিয়নে ৬৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে এবং বাকি ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গোটা জেলার মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলা মডেল ইউনিট হিসেবে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন।’
তেরখাদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শেখ মোঃ আনিছুল হক বলেন, ‘উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। এছাড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বাকি ৩টি ইউনিয়নে আহ্বায়ক কমিটি এবং ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে এবং বাকি ওয়ার্ডগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।’ দাকোপ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জি এম রেজা বলেন, ‘উপজেলায় রয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। এছাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি, বাকি দু’টিতে আহ্বায়ক কমিটি এবং ৯টি ইউনিয়নে ৮১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার চালনা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে কমিটি আছে।’
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মালিক ছরোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘২০০৩ সালে সম্মেলন ছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এই কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ৫১ জন করা হয়। এ কমিটি দিয়েই চলছে খুলনা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রম। তিনি বলেন, জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে রূপসা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এছাড়া বাকি সাত উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জেলার সম্মেলনের আগেই সাতটি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা শাখার সম্মেলন করতে নির্দেশনা দিয়েছি।