চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখালিশপুর ক্লিনিকের সত্বাধিকারী ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন রাত ১২টার পরে একটা রোগী আসে বুকে ব্যাথা নিয়ে। তাকে সম্ভাব্য সকল চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতালে সন্ত্রাসীরানগরীর খালিশপুর ক্লিনিকে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধরে নিয়ে খুমেক হাসপাতালের সামনে বেধড়ক পিটিয়েছে রোগীর স্বজনরা। জরুরি অবস্থায় এ চিকিৎসককে ভর্তি করা হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রোগীর স্বজনদের, তবে চিকিৎসকরা বলছে, অতিরিক্ত মদ পান করায় হার্ট এ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় কায়েস ও কৌশিক নামে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও গ্রেফতারকৃতদের জামিন না দেয়ার দাবিতে কালো ব্যাচ ধারণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবে বিএমএ খুলনাসহ চিকিৎসক সংগঠনগুলো। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী, সিটি মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরবার স্মারকলিপি প্রদান করবে চিকিৎসক সমাজ। এছাড়া আজ বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করে নতুন কর্মসূচি পালন ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ।
সূত্রে জানা যায়, নগরীর মুজগুন্নীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা শওকত সর্দার এর পুত্র সিটি পলিটেকনিক-এর ছাত্র মোঃ মনির হোসেন রিপন ওরফে রিপন সর্দার (২৪)-এর বুকে ব্যথা অনুভব করায় রাত ১২টায় খালিশপুর ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু পর মুহূর্তে তার কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও বুকে ব্যথা অনুভব করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দিন সোহাগ তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে টেনে হিচড়ে গাড়িতে উঠিয়ে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপন (২৪) কে মৃত ঘোষণা করেন। ততক্ষণে খুমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দিনকে বেধড়ক মারপিট করে উত্তেজিত স্বজনরা। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশের সাথেও বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কায়েস ও কৌশিক নামে দুইজনকে আটক করে।
রোগীর স্বজনরা বলেছে, রাত ১২টার সময় কলেজ ছাত্র রিপনের বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে খালিশপুর ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে বারবার ডাকার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’টি ইনজেকশন দেন। তার কিছুক্ষণ পরই রিপন জ্ঞান হারায়। তখনই আমাদের সন্দেহ হয়। কিন্তু ডাক্তার আমাদের কিছু না বলে সিটি মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। তখন আমরা চিকিৎসককে অনুরোধ করে নিয়ে আসি। কিন্তু সিটি মেডিকেলে আসার পর তিনিই আমাদের উপর চড়াও হয়।
খালিশপুর ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রাত ১২টার পর একজন রোগী বুকে ব্যথা নিয়ে আসে। মদপান অবস্থায় হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসককে জানানো হয়েছে গ্যাসের ব্যথা। চিকিৎসক তাকে সম্ভাব্য সকল চিকিৎসা দেন। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিটি মোডিকেল এ নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক সুজাউদ্দিন। কিন্তু হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে অস্ত্রের মুখে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সেখানেও তাকে বেধড়ক মারপিট করে তারা। পরে গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
সোনাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমতাজুল হক বলেন চিকিৎসককে লাঞ্ছিত ও জিম্মি করার অভিয়োগে কায়েস ও কৌশিক নামে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
বিএমএ সকল কর্মসূচির সাথে একাত্বতা প্রকাশ এবং একসাথে পালন করবে বলে জানিয়েছে বিপিএমপিএ ও বিপিএইচসিডিওএ।
অপরদিকে অন্য একটি সুত্র জানায়,আটককৃত কায়েস,কৌশিক ও মৃত রিপন গোয়ালখালী মদের দোকনে ঐদিন রাতে মদ খেয়েছিলো । আর এই মদের বিষক্রিয়ায় কলেজ ছাত্র রিপনের মৃত্যু হয় । রিপনের মৃত্যতে তার মাতাল বন্ধরা ক্ষিপ্ত হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে অস্ত্রের মুখে রিপনকে খুমেক হাসপতালে নিয়ে যায়। খুমেক হাসাপাতালে নিয়ে সেখানেও রিপনের বন্ধু কায়েস ও কৌশিকসহ তার অন্য সহযোগিয়া ডাক্তারদের সাথে খারাপ আচারন করায় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ চিকিৎসকের উপর হামলাকারী দুই মাতালকে আটক । এ সময় আটককৃর্তদের মুখ থেকে মদের দূর্গন্ধ পাওয়া যায় বলে জানাগেছে । মাতালদের হামলায় গুরুতর আহত চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন । মদ ব্যাবসায়ীকে রক্ষা ও মদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুকে ধামা চাপা দেয়া এবং প্রকৃত ঘটনা ভিন্নখানে নিতেই খালিশপুর ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর হামলা করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শীরা । উল্লেখ এর আগেও নগরীর গোয়ালখালী মদের দোকানের ভেজাল মদ খেয়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে । সরকারী আবগারীর নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অতিরিক্ত সময় নিয়ে মদ বিক্রি করা হয় । আর ঐ মদের দোকানের মদে রেকট্রিফাইড স্পিরিট মিশিয়ে ভেজাল মদ বিক্রি করে আসছে দির্ঘদিন যাবত । প্রশাসনের নাকের ঢগায় এ ধরনের ভেজাল মদ বিক্রি করে আসছে ।