ফকির শহিদুল ইসলামঃএখনও দৃশ্যমান হয়নি। তবে ভবনগুলো ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলায় পুরো এলাকা এখন ফাঁকা। মাঝখানে শুধু স্কুল ভবনটি থাকছে আরও কিছুদিন। এভাবেই ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নগরীর খালিশপুরের গোয়ালপাড়ার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল নির্মাণ প্রকল্প নাম দিয়ে এর কাজ এগিয়ে চলছে। প্রাথমিক কাজের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে টেন্ডার দিয়ে ভবন, ক্যাবল, ট্যাংকসহ সকল প্রকার অস্থাবর সম্পত্তি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। মাটির নিচে এস্কেভেটর দিয়ে খোঁজা হচ্ছে মূল্যবান ক্যাবল। একমাত্র মাটি ছাড়া কিছুই রাখা হবে না এমনটিও মনে হচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এ প্রকল্প এলাকা এখন পরিষ্কার করা হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় নতুন স্কুল ভবনটি নির্মাণ হলে পুরাতনটি ভেঙ্গে ফেলে মালামাল সরিয়ে ফেলা হবে। এভাবেই যখন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলছে সেই সময় খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে চুক্তির বাইরে মূল্যবান মালামাল সরিয়ে ফেলার অভিযোগ। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা অভিযোগ ছিল তাদেরকেই ডেলিভারী কমিটিতে রেখে কাজটিকে কলংকিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র অভ্যন্তেরের বিশেষ করে মূল গেট থেকে প্রবেশ করে হাতের ডান পাশ থেকে শুরু করে নদীর পাড় পর্যন্ত পুরো এলাকা প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে। শুধুমাত্র স্কুল ভবনটি এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িয়ে পাওয়া বোমায় নিহত ছয়জন কর্মকর্তার কবর সেখানে রয়েছে। স্কুল ভবনটি পরে ভেঙ্গে ফেলা হলেও কবরটি রাখা হবে। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল ট্যাংকিও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটির নিচে থেকে ক্যাবল তুলে ফেলা হচ্ছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে উপ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: জাহিদ হোসেন বলেন, ১২.৮২% কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চীনের কনসোর্টিয়াম অব হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড(এইচইআই) এবং জিয়াংসু ইটার্ন কোম্পানি লিমিটেড(ইটার্ন) নামের দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করবে। তবে ভবনসহ অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি সরিয়ে ফেলার জন্য কাজটি করছে সেনা কল্যাণ সংস্থা।
কাজের শুরুর দিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর চুক্তিস্বাক্ষর এবং চলতি বছর ৩০ এপ্রিল চুক্তি কার্যকরের মধ্যদিয়ে কাজটি শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের জুন মাসে। চায়নার এক্সিম ব্যাংকের সাথে এজন্য একটি ঋণ চুক্তিও সম্পন্ন হয়। যেটি হয় গত বছর(২০১৮) ১০ ডিসেম্বর। সর্বমোট তিন হাজার ৯১৯ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার এ কাজের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা দু’হাজার ৩৭০ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার টাকা, জিওবি’র এক হাজার তিনশ’ কোটি ৬৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা এবং পিডিবি’র অর্থায়ন হচ্ছে ৫৪৫ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলেও এখনও জিও হয়নি। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এইচএসডি ও গ্যাস উভয় দিয়েই চালানো যাবে। প্রকল্পটির কনসালটেন্ট ফার্ম পোল্যান্ডের আইএলএফ, পোলাস্কা এবং বাংলাদেশের ইসিবিএল, বাংলাদেশ লিমিটেড।
তবে প্রথম পর্যায়ের ন্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন মালামাল ও স্থাপনার নিলাম ও ডেলিভারী কমিটিতে কিছু কর্মকর্তার উপস্থিতি আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করছে কাজটি। বিশেষ করে ডেলিভারী কমিটির সদস্য সচিব যাকে করা হয় তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। প্রথম পর্যায়ের ডেলিভারী কমিটিতেও ওই ব্যক্তির নাম ছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে একাধিক পদোন্নতি স্থগিত আছে। ওই ব্যক্তি আবার স্টোরের অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে মালামাল সরিয়ে ফেলার কাজটি করাচ্ছেন। এতে তিনি যাই লিখেন না কেন তাতেই স্বাক্ষর করে দেন স্টোরের ওই অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। যা নিয়ে বিতর্ক উঠলেও খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী শেখ শহীদুজ্জামান বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তিনি ভাল লোক। তার পদোন্নতি স্থগিতের বিষয়টি একান্তই তার ব্যক্তিগত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ডেলিভারী কমিটির আহবায়ক এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, টেন্ডারের নিয়ম অনুসরণ করেই মালামাল ডেলিভারী দেয়া হচ্ছে।
তবে বিউবো চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া খুবিকে’র এক কর্মচারীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পূর্বের ন্যায় বর্তমানেও মালামাল ডেলিভারীর নামে অতিরিক্ত মালামাল সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।