সব ধরনের ব্যবহারের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীরসহ সারাদেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আধাবেলা হরতাল চলছে। হরতালে সরকারবিরোধী বড়দল ও সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে যানচলাচল। প্রতিদিনের মতো রোববার সকাল থেকেই গণপরিবহন ও প্রাইভেটকারে অফিসে ছুটছে ঢাকাবাসী।
সরেজমিন রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শাহবাগ, চানখাঁরপুল, বকশিবাজার, কাকরাইল, হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে যানচলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। রাস্তায় প্রাইভেটকারের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বাস ও রিকশার কোনো কমতি ছিল না।
বর্তমানে সরকারবিরোধী সর্ববৃহৎ জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে হরতালে কোনো সমর্থন না আসলেও তাদের দুই প্রধান শরিক বিএনপি ও গণফোরাম এতে সমর্থন দিয়েছে। তবে এ দুটি দলের কাউকে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি।
এদিকে হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পুলিশ তাদের পাশেই অবস্থান নিয়েছে। সেখানে পুলিশের সাঁজোয়া যান রয়েছে।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সর্দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘হরতালকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
হরতালের সমর্থক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার অবৈধ গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারছে না। কিন্তু তারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছে, এতে লাভ কার? বাণিজ্যিকভাবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে বলা হচ্ছে। সিলিন্ডার ব্যবসায়ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের লাভের কারণেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়ি ভাড়া বাড়বে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
গুলিস্তান থেকে উত্তরা যাওয়া বেসরকারি আইটি ফার্মের কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এই হরতাল অবশ্যই আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। বড় কোনো রাজনৈতিক দল এর উদ্যোগ না নিলেও বাম জোট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে হরতাল থাকলেও আমাদের অফিসতো আর বন্ধ থাকবে না। তাই হরতালে পূর্ণ সমর্থন থাকলেও মাঠে থাকতে পারছি না।’
এর আগে গত সোমবার (১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে আধাবেলা (সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত) হরতালের ডাক দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট।
৩০ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী, গড়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ। রান্নাঘরে যাদের গ্যাসের চুলা একটি, তারা এতদিন মাসে বিল দিতেন ৭৫০ টাকা। এখন থেকে গ্যাস বিল বাবদ মাসে তাদের ব্যয় হবে ৯২৫ টাকা। খরচ বাড়ল ১৭৫ টাকা। যাদের বাসায় দুই চুলা, তারা এতদিন বিল দিতেন ৮০০ টাকা। এখন তাদের দিতে হবে ৯৭৫ টাকা।
বাসাবাড়ির গ্যাসের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহার করা সিএনজির (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দামও বেড়েছে। সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে দাম বেড়েছে তিন টাকা। ৪০ টাকার সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা।