দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ১০ জন কর্মকর্তা দুই জন কর্মচারীসহ ১২ জনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তারা হলেন– প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মতিন, নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কাজী মনিরল ইসলাম, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কমল ও জহিরুল ইসলাম, চিফ অ্যাসেসর মোহাম্মদ আজম, জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুমেন, এস্টেট কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান শাকিল, হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, আইন সহকারী রফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী আব্দুস সালাম ও মোহাম্মদ হায়াতুল।
বিসিসির কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি একযোগে ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ওএসডি করার পর বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চিঠির মাধ্যমে এই ১২ জনকে চাকরিচ্যুত করা হলো।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট বিসিসি’র চতুর্থ পরিষদের নবম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মাসের বেতন পরিশোধপূর্বক চাকরিচ্যুত করা হলো বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। চিঠিতে সই করেন বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক।
চাকরিচ্যুত করার অনুলিপি বিসিসির সচিব, মেয়রের একান্ত সচিব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সব বিভাগীয় শাখা প্রধানকে দেয়া হলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি দেওয়ার বিষয় উল্লেখ নেই চিঠিতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান তিনি ছুটিকে আছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
প্রশাসনিক ও ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি সত্য। পরে বিবৃতির মাধ্যমে সবাইকে বিস্তারিত জানানো হবে।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, এখানে বিসিসির আইন অগ্রাহ্য করে অবৈধভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত করার আগে শোকজ ও তদন্ত কমিটি গঠনসহ একাধিক প্রক্রিয়ার বিষয় রয়েছে। কিন্তু বিসিসি আড়াই বছরের অধিক সময় আমাদের ওএসডি করে রাখে। ওই সময় বেতনের একটা অংশ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, তা দেয়া হয়নি।
সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমি চিঠি পাই। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
কাজী মনিরুল আরো অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণের উল্লেখ নেই চিঠিতে। বিধিমালা অনুযায়ী চাইলে আমাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারতো। কিন্তু কোনো ধরনের শোকজ ও তদন্ত কমিটি গঠন না করেই আমাকে চাকরিচ্যুত করা আইনসিদ্ধ হয়নি।
এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বিসিসির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউরকে বিভিন্ন সময়ে ঘুষ গ্রহণ ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ঠিকাদারকে বিল প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজ শাহীনকে নামে-বেনামে স্বজনদের বিপরীতে করপোরেশনের স্টল বরাদ্দ দেয়া এবং কর্মচারী ও গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, একই অভিযোগে বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিসিসির রাস্তা খুঁড়তে সহায়তা করার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়।