ক্লিনিক স্থাপন এবং রাস্তার সংস্কার কাজের বিরোধের জেরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রকাশ্য হামলায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম আহত হন এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান দীর্ঘক্ষণ নিজ গৃহে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা সচিব আবদুল মান্নানের বাড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শনিবার দুপুর পৌণে ১টার দিকে উপজেলার চাঁন্দপুর ইউনিয়নের চাঁন্দপুর গ্রামে স্বাস্থ্য সেবা সচিব আবদুল মান্নানের নিজ বাড়ি এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক এ হামলা চালায়।
স্বাস্থ্যসচিবের পরিবারের দাবি, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় এমপি নূর মোহাম্মদের অনুগত রাজনৈতিক লেবাসধারী লোকজন এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ এমপির বাড়ি একই গ্রামে। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিবের পরিবারের দেয়া জমিতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ক্লিনিক নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা এমনকি দেখভাল করছেন স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান।
এ ক্লিনিক নির্মাণ বিষয়ে স্থানীয় এমপিকে অবগত করা হয়নি এবং গ্রামের সুবিধাজনক অন্য জায়গার পরিবর্তে স্বাস্থ্যসচিব নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্থানে ক্লিনিক নির্মাণ করছেন বলে ওই এমপির অনুগত লোকজনসহ গ্রামের কিছু লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। আর এ ঘটনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে চাপা উত্তেজনা ছিল।
ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসচিব
ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যসচিব
শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান নিজ গ্রামের বাড়ি চাঁন্দপুরে আসেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে তিনি বাড়ির অনতিদূরে নির্মাণাধীন ক্লিনিকটির কাজ পরিদর্শনে যান।
এ সময় ২৫/৩০ জন লোক সেখানে গিয়ে বলেন, ক্লিনিক নির্মাণের ব্যাপারে স্থানীয় এমপি কিছুই জানেন না। তাই এ কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
এ নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে তাদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটলে একপর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
কিন্তু দুপুর পৌনে ১টার দিকে কয়েকটি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসযোগে ওই সব লোকজন লাঠি ও ধারালো অস্ত্রসস্ত্রসহ নির্মাণাধীন ক্লিনিকের সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় তারা স্বাস্থ্য সচিবের নাম ধরে গালিগালাজ শুরু করে ও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলে।
এ সময় সচিবের বাড়িতে অবস্থানরত অ্যাসিল্যান্ড আশরাফুল আলম গিয়ে ঘটনা জানতে চাইলে তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার শিকার অ্যসিল্যাণ্ড পাশের পুকুরে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। একই সময় ক্লিনিকের কাজে নিয়োজিত নির্মাণ শ্রমিকদেরও মারধর করে তাড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা।
এ খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেলে র্যাবেরও একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এবং পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম যুগান্তরকে জানান, এ হামলার ঘটনায় অ্যাসিল্যান্ড লাঞ্ছিত ও আহত হয়েছেন।
তবে, মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করতে না পারায় স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অবশ্য, স্বাস্থ্য সচিবের ছোট ভাই নাসির উদ্দিনের দাবি, হামলাকারীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থক। আর এ হামলার নেতৃত্ব দেন চান্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মুরাদ মিয়া।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম এ জলিল জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় এমপি ও পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনায় তিনি দু:খিত ও বিব্রত। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই তার এবং তার লোকজনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
তিনি দাবি করেন, যতদূর জানতে পেরেছেন, স্বাস্থ্য সচিব তার নিজ বাড়ি সংলগ্ন স্থানে ক্লিনিক নির্মাণের কাজ শুরু করায় এবং কৃষকের জমি থেকে ওই ক্লিনিক ও রাস্তার জন্য মাটি তুলে নেয়ায় এলাকার অধিকাংশ লোকজন ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ ঘটনা হয়তো এসবেরই বহিঃপ্রকাশ।
স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান জানান, আমার স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিক ও তার পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছিল। শনিবার দুপুরের কিছু উশৃংখল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেন। এ নির্দেশ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ দিয়েছেন বলে তারা জানান। এসময় তারা এসিল্যান্ড ও নির্মাণ শ্রমিকদের উপর হামলা এবং শ্রমিকদের থাকার ঘর ভাংচর করে।