অনলাইন ডেস্কঃমণিরামপুর জনতা ব্যাংকের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক সাবেক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও একাধিক ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা একাউন্টে জমা না করে আত্মসাতের ঘটনায় ঢাকা ও যশোরের অডিট টিমের সদস্যরা তদন্ত শুরু করেছেন। ঘটনা তদন্তের স্বার্থে অডিট টিমের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে জানিয়েছেন, ব্যাংকের সুনাম রক্ষায় আগে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল রবিবার দুপুরে জনতা ব্যাংকে ঢাকা থেকে আসা দুই সদস্যের অডিট টিম-এর বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাখা ম্যানেজার এমরান হোসেন শামীম। এ ছাড়া গনমাধ্যমে জনতা ব্যাকের গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎকারী আলমগীর কবীর ও আশীষ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েও যশোর এরিয়ার ডিজিএম তাদের রক্ষার কৌশল করে একজনকে বদলী ও অন্যজনকে এরিয়া অফিসে ওএসডি করা হয় । আর এই কর্মকর্তাদের বদলী ও ওএসডি করা হয় তারা শাখা ব্যাবস্থাপক ও এরিয়া প্রধানকে মোটা অংকের উৎকোচ দেয়ায় । এ ছাড়াও জনতা ব্যাংক যশোর এরিয়া অফিসের ডিজিএমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঋন বিতরনে কমিশন এবং খেলাপী ঋন গ্রহিতা ব্যাবসায়ীদের সাথে গভীর সখ্যতা এবং তার অধিনস্থ শাখা কর্মকর্তাদের বদলী বানিজ্যের ।
ব্যাংকে ঢাকা থেকে আসা অডিট টিমের সদস্যদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, গ্রাহকদের টাকা তাদের একাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎকারী আলমগীর কবীর ও আশীষ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু তাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তার ৮ লাখ টাকা একাউন্টে জমা করা হয়নি। তবে সাবেক এই জনপ্রতিনিধির টাকা আত্মসাৎকারী আশীষ ঘোষের ব্যাপারে তার এখন কোন অভিযোগ নেই বলে দাবি করেন অডিট টিমের সদস্যরা। এদিকে অডিট টিমের সাথে কথা বলার সময় নতুন করে জানা যায়, পৌর এলাকার হাকোবা গ্রামের পবণ কুসারীর ৪ লাখ এবং পৌর শহরের দাদা ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক প্রকাশ ঘোষের ৮ লাখ টাকা তাদের একাউন্টে জমা করা হয়নি। তবে পবণ কুসারী তার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অডিট টিমের সামনে প্রকাশ করলেও জড়িতরা এলাকার সন্তান হিসেবে পত্রিকায় প্রকাশ না করার দাবি জানান। দাদা ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক প্রকাশ ঘোষ জানান, তাদের টাকা নিয়ে সমস্যা মিটে গেছে। পৌর শহরের মুদি ব্যবসায়ী মিশন সাহার পিতা জানান, তাদের আত্মসাৎ করা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা গতকাল রবিবার দুপুরে ফেরত পেয়েছেন।
মণিরামপুর জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার এমরান হোসেন শামীম বলেন, একাউন্টে জমা না করা টাকার মধ্যে ১১ লাখ আত্মসাৎকারীদের নিকট থেকে আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন গ্রাহককে দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে পাওনাদার বাকী গ্রাহকদের টাকা একই ভাবে আদায় করে পরিশোধ করা হবে। তিনি ম্যানেজার আরোও বলেন, গ্রাহকদের আত্মসাৎ করা টাকা পরিশোধের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের সুনাম রক্ষায় জড়িত ২ কর্মকর্তার বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
এদিকে গ্রাহকদের টাকা একাউন্টে জমা না করে আত্মসাতের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার পর ওই দুই কর্মকর্তার সাথে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ও শাখা ম্যানেজারসহ আর কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে সচেতন মহলসহ স্থানীয়দের মাঝে। কেন না উক্ত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হবার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। অডিট টিমের সদস্যরা জানান, গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার পর অপরাধের ধরণ হিসেব করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হবে। গতকাল রবিবার অডিট টিমের কার্যক্রম চলাকালে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎকারী আলমগীর কবীর ও আশীষ ঘোষকে মণিরামপুর জনতা ব্যাংক শাখায় তলব করা হয়।