পাইকগাছার চিরচেনা সেই শিবসা ও কপোতাক্ষ নদী পরিণত হচ্ছে মরা খালে। এক সময়কার ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা জেলার পাইকগাছা কপোতাক্ষের দু’পাড়ে অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই রুগ্ন হচ্ছে। এমনকি নদীর দু’পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ও বর্জ্যের চাপে ঝিমিয়ে গেছে নদীটি।
জেলার পাইকগাছা অভ্যন্তরে শিবসা, কপোতাক্ষের একাংশে নেই কোন জোয়ার ভাটার উত্তাল ঢেউ। হারিয়ে গেছে নদীর যৌবন। শিবসা কপোতাক্ষের স্রোতের তালে তালে বেধেছে কত কিশোর-কিশোরীর জীবন বিধান। ঢেউ এর সাথে দুলেছে কত যুবক-যুবতির হৃদয় তুলি। কত নব দম্পতি ঘর বেধেছে এর অববাহিকায়। কেউ তার খোঁজ আর রাখেনি। এই শিবসা কপোতাক্ষকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় নেতা কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা নানা বাণী শোনালেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বরং উল্টো যাদের কাধে নদী রক্ষার দায়িত্ব তারাই নদী ভরাট করে চলেছে।
মাছ চাষের নামে নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ সৃষ্টি করে পানির স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। কেউবা নদীর চরে ময়লার স্তুপ বানাচ্ছে। এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের মালামাল আনা নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা ছিল শিবসা কপোতাক্ষ নদী। আর এখন সেই নদীকে সবাই ভুলতে বসেছে। যে যেভাবে পারছে সে সেইভাবে দখল ও দূষণ করছে।
নদী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাশিমনগরের উত্তরে, কপিলমুনি বাজারের পিছনে, গোলাবাড়ি মোড়, আগড়ঘাটা, বোয়ালিয়া খেয়াঘাট, রাড়ুলী, আলোকদীপ, শিববাটী, কাঁটাখালী বাজার, মরিচচাপ খেয়াঘাট, বড়দল খেয়াঘাট, চাঁদখালী বাজার এলাকা ও পাইকগাছা বাজার, বয়রা গেট, হাড়িয়া নদীর মুখসহ শিবসা ও কপোতাক্ষের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। ভূমি দস্যুরা নদীর মাঝখান বরাবর নানা ধরনের কার্যকলাপ চালাচ্ছে। অনেক জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। কেউবা গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। কেউ বা বানাচ্ছে ইটের ভাটা।
এক সময়কার খরস্রোতা শিবসা, কপোতাক্ষ নদীটি স্থান ভেদে ৫০০ থেকে ১৫০০ ফুট ও তার অধিক প্রশ্বস্ত নদীটি বর্তমানে কোথাও-কোথাও ১০০ থেকে ২০০ ফুটে পরিণত হয়ে গেছে। এর ফলে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। নদীটি দখল ও দূষণমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন দুই নদীর অববাহিকার বসবাসকারী স্থানীয়রা।