শোকের মাস আগস্ট শুরু হল। ঘাতকরা এ মাসের ১৫ তারিখ সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। সেই থেকে এ দিনটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর এক শোকের দিন। প্রতি বছর আওয়ামী লীগসহ পুরো জাতি আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে। এ বছর মাসটির প্রথম দিনে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
এছাড়া মহামারী করোনাভাইরাসের কারণেও শোকের মাসের কর্মসূচিও বাস্তবায়ন হবে সীমিত পরিসরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তবে অনলাইনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোকের মাস পালন করবে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। তার (শেখ হাসিনা) বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাসে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে এবার প্রায় সব আয়োজন হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। পাশাপাশি সীমিত উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতির পিতার সমাধি ও প্রতিকৃতি এবং বনানীতে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব থাকবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহযোগী সংগঠন এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আগস্ট মাসের কর্মসূচি পালন করবে।
এছাড়া ৫ আগস্ট জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে কর্মসূচিটি পালন করবে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। সর্দি-কাশি- জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়েও অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে না। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সবাইকে নিরাপদ রাখতে এমন নির্দেশনা সংবলিত নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার নির্দেশিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল পালনে পৃথক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভা-সমাবেশে সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নির্দেশনায় আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল করার ক্ষেত্রে জনসমাগম যথাসম্ভব কম রাখতে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থল বা কক্ষের আয়তনের ওপর লোকসংখ্যার উপস্থিতি নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে আসা সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তিনি যেন অংশগ্রহণ করতে না পারেন। প্রবেশপথে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব না হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বসার স্থানটি নির্দিষ্ট করতে হবে।