খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫তম জাতীয় স্নাতক গণিত অলিম্পিয়াড-২০২৪ এর খুলনা আঞ্চলিক পর্ব শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ গণিত সমিতি ও এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ অলিম্পিয়াডে খুলনা অঞ্চল থেকে ১০ জন প্রতিযোগী নির্বাচিত হয়েছেন। বিকাল ৩.৩০ মিনিটে ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের ইউআরপি লেকচার থিয়েটারে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারস্বরূপ সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান।
এ সময় তিনি বলেন, গণিত হচ্ছে বিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক বিষয়। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার ও আধুনিক মানবিক সভ্যতা বিনির্মাণে গণিতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অসামান্য অবদান রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথেও গাণিত্যিক মডেল ও ফর্মূলা জড়িত।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে যে যত গণিত জানে, সে তত বুদ্ধিমান। তাই শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করার জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতায় বেশি বেশি অংশগ্রহণ করতে হবে। আমি এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। একই সাথে এ অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে খুলনা অঞ্চল থেকে সেরা গণিতবিদ উঠে আসবে এবং তারা দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমি আশাবাদী।
তিনি এ অলিম্পিয়াড আয়োজনের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিন এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ গণিত সমিতি ও এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এবং ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে যে সকল ইতিবাচক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম গণিত অলিম্পিয়াড। এ ধরনের প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হলেও বাংলাদেশ গণিত সমিতি ও এ এফ মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন সে ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানান।
অরগানাইজিং কমিটির আহ্বায়ক ও গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আজমল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণিত ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মুন্নুজাহান আরা।
এ সময় গণিত অলিম্পিয়াডের পরিদর্শক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. কল্যাণ কুমার দে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক মোঃ জসিম উদ্দিন, অরগানাইজিং কমিটির সদস্য-সচিব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ০৯.১৫ মিনিটে কর্মসূচির শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্ত্বরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গণিত সমিতি ও গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করে এ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল আলম ও ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আজমল হুদাসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের ইউআরপি লেকচার থিয়েটারে অলিম্পিয়াডের মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের অলিম্পিয়াডে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনা অঞ্চলের ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নাতক পর্যায়ের মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর অঙ্কন হালদার, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ তৌহিদুল আকবর আদিব, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরোজ রহমান খা, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিত্য শাফি চন্দ্র, কুয়েটের মোস্তফা আদিব চৌধুরী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তীর্থদীপ ঢালী, কুয়েটের মোঃ মেহেরান হোসেন হোসেন হিমেল, মোঃ রাব্বি হোসেন, সানজানা চৌধুরী এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিউলি সরকার।