সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা বৃহস্পতিবার , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আশাশুনিতে পাউবো’র সহস্রাধিক মিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ : আতঙ্কিত এলাকাবাসী | চ্যানেল খুলনা

আশাশুনিতে পাউবো’র সহস্রাধিক মিটার ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ : আতঙ্কিত এলাকাবাসী

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃসাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, আশাশুনি সদর, শ্রীউলা ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহস্রাধিক মিটার ভেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন সময় কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর পাউবো’র ভেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে নোনা পানি ঢুকে এলাকার খাল বিল ও পুকুরের মিষ্টি পানির মাছসহ সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস করে দিচ্ছে। পাশাপাশি নদীর নোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, ফসলসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকার ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ এখন বিলুপ্ত প্রায়। নোনা পানির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে গ্রামাঞ্চলের খাঁটি ও প্রাকৃতিক খাদ্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বর্ষা মৌসুম ছাড়াও যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশাশুনি উপজেলার এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাঁধ ভেঙে সংশ্লিষ্ট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলার মধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়ন সবচেয়ে ঝুঁকিপূণ। প্রতি বছর এই ইউনিয়নের কোন না কোন জায়গার বাঁধ ভাঙা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ বার এ ইউনিয়নের কোন না কোন জায়গায় বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভৌগলিক কারনে এ ইউনিয়নের দু’টি গ্রাম কোলা-হিজলিয়া খোলপেটুয়া নদীর পশ্চিম পাশে শ্রীউলা ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত। যে কারনে এখানে বাঁধ ভাঙ্গলে মূলত প্লাবিত হয় শ্রীউলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়ন তিন দিক থেকে খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ বেষ্ঠিত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সবশেষ গত ৮ মাস আগে চাকলা গ্রামের বাঁধ ভেঙে কয়েকশ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৫শ’ বিঘা জমি বাদ দিয়ে একটি বিকল্প রিংবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানো হয়েছে। ফলে ওই ৫শ’ বিঘা জমিতে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবারের বসত ভিটায় এখন জোয়ার-ভাটা খেলছে। তিনি আরো বলেন, প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের সোহরাব সানার বাড়ি থেকে সাইদ সানার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ চেইন ভেড়িবাঁধ, কুড়িকাহনিয়া গ্রামের ঋষিপল্লী থেকে রুইয়ারবিল পর্যন্ত প্রায় ৫০ চেইন, হরিশখালী গ্রামের স্লুইচগেট থেকে আয়ুব আলীর মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় ৩০ চেইন, কোলা গ্রামের পুরাতন জামে মসজিদ থেকে হিজলিয়া প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় ৬০ চেইন বাঁধ দীর্ঘদিন যাবত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার অবহিত করার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধুমাত্র কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় কয়েক চেইন রাস্তার মাটির কাজ করছেন তারা। তবে এ কাজটি চলছে শম্ভুক গতিতে। আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ ভেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে আছে। ফলে বর্ষা এলেই আমাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করতে হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন বলেন, আনুলিয়া ইউনিয়নের সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিছট গ্রামের ভেড়িবাঁধ। বিছট প্রাইমারি স্কুলের সামনে থেকে মোড়ল বাড়ি ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত প্রায় ৮শ’ মিটার ভেড়িবাঁধ, মনিপুর খেয়াঘাট থেকে বাগালী স্লুইচগেট পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ মিটার, কাকবাসিয়া খেয়াঘাট থেকে চেউটিয়া আব্দুল মালেকের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ মিটার ভেড়িবাঁধ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যে কোন মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য বিছট গ্রামের মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, খোলপেটুয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে বিছট গ্রামের গাজীবাড়ি জামে মসজিদ, বিছট মোড়লবাড়ি জামে মসজিদ, বিছট ইফতেদায়ী ও হাফেজীয়া মাদ্রাসা, সরকারি পুকুরসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে গৃহহারা হয়েছে বিছট গ্রামের শতাধিক পরিবার। নদী ভাঙনে বাস্তহারা হয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিছট সরকারি প্রাইমারী স্কুল, বিছট গ্রামের গাজীবাড়ি, সরদার বাড়ি, মোল্লাবাড়ি ও মোড়লবাড়িসহ গ্রামের কয়েকশ’ পরিবারের লোকজন। প্রতিনিয়ত ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটে তাদের। তিনি দ্রুত বিছট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি জানান।
শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বলেন, শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা এলাহি বক্সের মৎস্য ঘের থেকে রফিক সাহেবের মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ ও থানাঘাটা জামাল মাস্টারের ঘের থেকে হাজরাখালী হয়ে বসির সাহেবের মৎস্য ঘের পর্যন্ত প্রায় ৪ কিঃমিঃ ভেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবছর এসব এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। নদীর কিনারা থেকে পিছিয়ে বিকল্প রিংবাঁধ দিতে দিতে গ্রামের বাসযোগ্য জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব বাঁধ মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বর্ষা মৌসুমে গতবছরের মত আবারও ডুবতে হবে।
খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে খাজরা বাজার সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১শ’ মিটার ভেড়িবাঁধ ও গদাইপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ১শ’ মিটার ভেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা না নিলে যেকোন সময়ে নদীর জোয়ারে তোড়ে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন বলেন, উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিঃমিঃ দূরে দয়ারঘাট গ্রামের খোলপেটুয়া নদীর ভেড়িবাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত। ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে ভাঙতে ভাঙতে জেলেখালী ও দয়ারঘাট গ্রাম দু’টিই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দু’টি গ্রামের আর মাত্র কয়েক ঘর অবশিষ্ট আছে। বিগত এত বছর ধরে নদী ভেঙে একাধিকবার উপজেলা সদর প্লাবিত হলেও অদ্যাবধি স্থায়ী কোন সমাধান করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরদিকে কুল্যা ইউনিয়নের বেতনা নদী ভাঙনে গাবতলা ও বুধহাটা ইউনিয়নের বুধহাটা বাজার এলাকা এবং মরিচ্চাপ নদী ভাঙনে কেয়ারগাতি গ্রামের বাঁধে ভাঙন চলছে। বর্ষা মৌসুম এলেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে এসব এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা থাকে। নদী ভাঙনের কবল থেকে আশাশুনি উপজেলাবাসীকে রক্ষা করতে ক্ষতিগ্রস্ত এলকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৪২০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি পয়েন্টে ১২কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে আশাশুনি উপজেলার ৮০ কিলোমিটার বাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিগত সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা ও সিডরের আঘাতে এসব ভেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না আসায় এসব ভেড়িবাঁধ তেমনভাবে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় টেকসহি বাঁধ নির্মাণের লক্ষে পাউবো বিভাগ-২ এর অধিনে ৭/১, ৭/২ ও ১৩-১৪/১ এবং ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারের ভাঙন কবলিত ৩৪টি পয়েন্টে বাঁধ সংষ্কারের জন্য ইতিমধ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চাহিদার বিপরিতে বরাদ্দের পরিমাণ এতোই নগণ্য যে তা দিয়ে যতসামান্য কিছু করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আরো প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে আশাশুনি উপজেলার এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধসমূহ সংস্কার করা হবে।

https://channelkhulna.tv/

সংবাদ প্রতিদিন আরও সংবাদ

সাবেক আইজিপি ও কেএমপি কমিশনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের ওপর ডিম নিক্ষেপ

আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার

কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না তাবলিগ জামাত

কালীগঞ্জে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে যুবক আটক

পাটের ব্যাগ পুনরায় সর্বত্র চালুর উদ্যোগ নিয়েছি : সাখাওয়াত

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।