সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা মঙ্গলবার , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
'ইতিহাস থেকে বিস্মৃত এক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনগাঁথা' | চ্যানেল খুলনা

‘ইতিহাস থেকে বিস্মৃত এক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনগাঁথা’

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতীসত্তার উন্মেষ ও বিকাশে আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস। স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন এবং স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ ছিল বন্ধুর। এই দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় এবং এর অনিবার্য পরিণতি ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে যাদের সুমহান আত্মদান এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, শহীদ মোক্তার হোসেন দাড়িয়া তাদের একজন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য তার রয়েছে অপরিসীম আত্মত্যাগের সমৃদ্ধ ইতিহাস।

মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার আশুতিয়া গ্রামে। তিনি ছিলেন ছাহাব উদ্দিন দাড়িয়া এবং সামেত্য বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান। মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা মোক্তার হোসেন ৬০’র দশকের শুরুর দিকে সংসারের হাল ধরার উদ্দেশ্যে চলে আসেন খুলনায়। মহসিনাবাদ ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। প্রথমে খুলনা শিপইয়ার্ডে এবং পরে বিজিএমসি তে চাকুরি করেন। ১৯৬৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কোটালিপাড়া উপজেলার বহলতলী গ্রামের সম্ভ্রান্ত শিকদার পরিবারের মেয়ে মেমিয়া বেগমের সাথে।

দেশপ্রমে উদ্বুদ্ধ মোক্তার হোসেন যুবক বয়সেই স্বপ্ন দেখেন শোষণহীন, সাম্যতা ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকের সীমাহীন বৈষম্য ও দুঃশাসন দেখে হতাশ হন। এমনি এক সময়ে আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকারের দাবিতে ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা উত্থাপন করলে তা বিপুল জনসমর্থন লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের লাখো জনতা একাট্টা হয়। আন্দোলন জোরালো হয় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে। সেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন ২৯ বছরের টগবগে সুদর্শন যুবক মোক্তার হোসেন।

চাকরির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন মোক্তার হেসেন। মোক্তার হোসেন এবং মেমিয়া বেগম নবদম্পতির কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন কন্যা মাহফুজা খানম কচি এবং পুত্র মফিদুল ইসলাম টুটুল। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান তখন আন্দোলন, সংগ্রামে উত্তাল। নববিবাহিতা স্ত্রী এবং দুই অবুঝ শিশু সন্তানের সংসার, চাকুরি এবং ঠিকাদারি ব্যবসা এতকিছু সামলেও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। শ্রম এবং সাংগঠনিক নৈপুণ্যে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন খুলনার মহসিনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা। মহসিনাবাদ ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় তখন গোপালগঞ্জের অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং রিক্সা শ্রমিকের বসবাস। বিভিন্ন প্রয়োজনে কিংবা বিপদে-আপদে তাদের পাশে থাকতেন মোক্তার হোসেন। এভাবে একসময় তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় তার।

৬৬’র ছয় দফা এবং ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে মোক্তার হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় তারা। সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্পদিনেই শহর আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন মোক্তার হোসেন। ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৮’র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং এর অনিবার্য পরিণতি ৬৯’এ ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান- সব আন্দোলন, সংগ্রামেই মহসিনাবাদ এলাকায় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন দেশপ্রেমিক মোক্তার হোসেন। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি এবং ঠিকাদারি ব্যবসায় পুরোপুরি নিয়োজিত করেন নিজেকে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষা সৈনিক, খুলনা সদর আসন থেকে নির্বাচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাংসদ জননেতা এম এ বারী’র সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। উভয়ে ছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা।

ছাত্রজনতার তুমুল গণঅভুত্থানে শেখ মুজিব কারামুক্ত হন। লৌহমানব জেনারেল আইয়ুব খানের পতন হয়। আওয়ামীলীগের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন দেন নতুন রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান।নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ কর্মি মোক্তার হোসেন। ৭০’র ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত টালবাহানার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। তিনি বাঙালীদেরকে গেরিলা যুদ্ধ প্রস্তুতির সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেন।

ঢাকা রেসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা মোক্তার হোসেন। ২৫ শে মার্চের কালরাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হন মোক্তার হোসেন। অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে চলে যান গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। স্ত্রী এবং অবুঝ শিশু সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন অসীম সাহসী মোক্তার হোসেন। নাম লেখান ‘হেমায়েত বাহিনী’তে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। গ্রামের অনেক মানুষ তার নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিক মোক্তার হোসেন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন স্থানীয় সংগঠক। দেশকে শত্রুমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে যখন ব্যস্ত সময় পারছিলেন তিনি ঠিক এমনি সময়ে নভেম্বর মাসে জন্ম হয় তার আরেক কন্যা মাকসুদা আক্তার রুনুর। বাবাকে চেনার, বাবা বলে ডাকতে শেখার আগেই জন্মের মাসখানেকের মধ্যেই পিতাকে হারান তিনি।

মোক্তার হোসেনের পরিবার এবং আত্মীয়, স্বজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তাদের ছিল অবিচল আস্থা। মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার ভগ্নিপতি আলী আকবর ফকির, মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন শেখ এবং ভায়রা সিরাজুল ইসলাম শিকদার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারনে তার খুলনাস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসররা। তার মামাদের ঘর, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় এলাকার রাজাকাররা।

ডিসেম্বরের প্রথমদিকে গোপালগঞ্জ শত্রুমুক্ত হলে মোক্তার হোসেন নৌকাযোগে খুলনা আসেন। রুপসা নদীর তীরবর্তী তার পূর্বপরিচিত হক সাহেবের বাসায় ওঠেন ১২ ডিসেম্বর। এ সময় একের পর এক সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। আনন্দে আত্মহারা মোক্তার হোসেন চূড়ান্ত বিজয় উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ১৩ ই ডিসেম্বর সকালে নৌকাযোগে রুপসা নদী পার হয়ে খুলনা ঘাটে পৌঁছান তিনি। ১৬ ই ডিসেম্বর তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। হানাদার বাহিনীর অসহায় আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম বিড়ম্বনায় তার চূড়ান্ত বিজয় উদযাপন করা হয়ে ওঠেনি। রাজাকারদের প্ররোচনায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর তিনি রুপসা ঘাটে পৌছানো মাত্র হাত ও চোখ বেঁধে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরিবারের সদস্যদের ধারণা তাকে গল্লামারি বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বধ্যভূমির হাজারো মাথার খুলি আর কঙ্কালের মধ্যে হয়ত তার খুলি, কঙ্কালটি ও মিশে একাকার হয়েছে। রক্ত, মাংস হয়েছে মাছের খাদ্য। মাটি হয়েছে উর্বর। পিতৃহারা সন্তানদের জন্য এর চেয়ে বড় কষ্টের এবং বেদনার আর কি হতে পারে? পিতার লাশটি একনজর দেখার, দাফনের এবং জানাযা পড়ার সুযোগটুকু থেকে বঞ্চিত হয়েছে সন্তান ও স্বজনরা।

শুধু মোক্তার হোসেন নন, মোক্তার হোসেন এর মত হাজারো দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারন মানুষকে নির্বিচারে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে এই বধ্যভূমি সহ খুলনার অসংখ্য রাজাকার ক্যাম্প ও তাদের পছন্দসই নিরিবিলি জায়গায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থানেই ছিল রেডিও পাকিস্তানের খুলনা শাখা। এটি ছিল পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র। এটি ‘গল্লামারি বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বধ্যভূমি। সারাদিন শহর ও গ্রাম হতে ধরে আনা লোকদের রাতে এখানে এনে হাত, চোখ বেঁধে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হত। কাউকে কাউকে হত্যা করা হত জবাই করে। সাথে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

এই বধ্যভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আজকের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ৭১’র গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র ‘বেতার ভবনটি’ই বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। অথচ গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন বহন করা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র নেই। এখানে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হোক- যাতে করে গল্লামারি বধ্যভূমিতে হত্যার শিকার শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিচয় শনাক্ত করা যায় এবং তাদেরকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া যায়। কারন এই শহীদদের হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত শহীদের বেসামরিক গেজেটভুক্ত নন। তাদের পরিচয় ও শনাক্ত করা যায়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজনরা এখনো খুঁজে ফিরে তাদের!

রাষ্ট্র মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার আত্মদানের স্বীকৃতি দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রকাশিত শহীদের বেসামরিক গেজেটে ৯৩৬ নং- এ মোক্তার হোসেন এর নামটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে শহীদ পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকারের দেওয়া ২০০০ টাকা অনুদান পেয়েছিল এই পরিবারটি। সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে তার নামে নিজ গ্রাম আশুতিয়ায় ‘শহীদ মোক্তার হোসেন স্মৃতি যাদুঘর’ নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। দেশপ্রেমিক শহীদ মোক্তার হোসেনের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসুরি একমাত্র পুত্র সন্তান সাবেক ছাত্রনেতা খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মফিদুল ইসলাম টুটুল।

পিতৃস্নেহ ও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত মুক্তিযুদ্ধকালীন মাত্র ২ বছরের অবুঝ শিশু টুটুলের বয়স এখন ৫৩। শহীদ পিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। এই শহীদ সন্তানের সান্ত্বনা একটাই, পিতার জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে রাষ্ট্র কি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সকল শহীদের আত্মদানের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পেরেছে? স্বাধীনতার এত বছর পরেও কি রাষ্ট্র শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পেরেছে? মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পেরেছে?

জীবনের বিনিময়ে কোন অনুদান বা ক্ষতিপূরণ-ই যথেষ্ট নয়। তবু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার তালিকাভূক্ত শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে মাসিক ভাতার আওতায় এনেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এটি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। দেশের প্রায় সকল বধ্যভূমিগুলো এখনো অরক্ষিত অবস্থায় আছে। সকল বধ্যভূমি যথাযথ সংরক্ষণ করা সময়ের দাবি। সেখানে শহীদদের তালিকা এবং পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বরতা, নির্মমতা ও নৃশংসতার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এতে করে রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যদের প্রতি যেমন বর্তমান প্রজন্মের ঘৃণা জন্মাবে তেমনি সকল শহীদ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাদের সম্মান জাগ্রত হবে।

মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের জন্য জেলা শহরগুলোতে একটি করে ‘শহীদ পল্লী’ এবং ‘বীর নিবাস’ করলে মানুষ জানতে পারবে কারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। কারা দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এবং আওয়ামী রাজনীতিতে তাদের অবদান এবং অবিনাশী সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্ম জানতে আগ্রহী হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও আত্মদানের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ, লাল সবুজের আমাদের অস্তিত্বের পতাকা আর আমাদের পরিচয়ের স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের এবং তাদের স্বজনদের এতটুকু প্রাপ্তির অধিকার কি যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত নয়? এতে করে শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মনোবেদনা একটু হলেও লাঘব হবে। রাষ্ট্রও তার ৫০ বছর ধরে বয়ে বেড়ানো দায় থেকে মুক্ত হবে।

লেখক- মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট ও তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা।

https://channelkhulna.tv/

খোলামত আরও সংবাদ

‘ছাত্ররা আমার কথা শুনলো না, শুনলো ভুট্টো সাহেবের কথা’

প্রিয় মানুষকে অনুকরণ এবং অনুসরণের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে

সহনীয় মূল্যে ইলিশ : মডেল উদ্ভাবন

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভিন্ন বাংলাদেশ, ক্রীড়াঙ্গনেও সফলতা

আরেক অর্জন: নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে দ্রব্য মূল্য

পিতার অপমানের দায় কন্যাকেই নিতে হবে

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।