ইমাম অর্থ নেতা। সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম হলেন মসজিদের ইমাম। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা ও বুকে জমানো ব্যথা ও কথাগুলো ইমামের কাছে আমানত রাখেন। ইমামরাও বিভিন্ন উপায়ে সমাজের মানুষের দৈনন্দিন হাজারো সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।
ইসলামের শান্তিময় জীবনব্যবস্থা আদব শিষ্টাচার ও নৈতিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইমাম সমাজ প্রতিনিয়ত জ্ঞানের আলো বিতরণ করে থাকেন। সমাজ থেকে মদ, জুয়া, দুর্নীতি, যৌন হয়রানি, জুলুম ও ধর্ষণ দূর করে ন্যায়, ইনসাফ ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইমামের বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইমামদের গুরুত্ব অপরিসীম।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আলোকিত সামাজ গড়ার কারিগর অধিকাংশ ইমামই আজও দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। লক্ষ করলে দেখা যায় বর্তমান বাজারে একজন দিনমজুর শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হলেও সমাজ প্রতিনিধি একজন ইমামের দৈনিক হাজিরা হয় মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
এমনকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে মসজিদ কমিটির পর্যাপ্ত বেতন প্রদানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ইমামের বেতন খুবই কম; যা দিয়ে একজন ইমাম ফ্যামিলিসহ ঢাকা থাকবেন তো দূরের কথা; মা-বাবা স্ত্রী সন্তান গ্রামে রেখেও সংসার চালানো কঠিন ব্যাপার।
অথচ ইমামের সামাজিক ও আত্মমর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে দরিদ্রতার এ যন্ত্রণা কারও কাছে শেয়ার করতে পারেন না; বরং সব দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে নিজ দায়িত্ব পালন করে যান। এ ছাড়া আরও অসংখ্য সমস্যা ও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ইমাম সমাজ তাদের মহান দায়িত্ব পালন করে থাকে। ইমামদের মৌলিক কয়েকেটি সমস্যা তুলে ধরা হলো-
১. সমাজের অবক্ষয় তথা মদ, জুয়া, সুদ, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনা করলে এহেন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ইমামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপবাদ আরোপ করে। এমনকি তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করে থাকে।
২. মসজিদ কমিটির সঙ্গে ইমামের কোনো বিষয়ে মতের অমিল হলেই তাৎক্ষণিক বিনা নোটিশে ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো আইনের তোয়াক্কা করা হয় না।
৩. একজন ইমাম ২৫-৩০ বছর কোনো মসজিদের দায়িত্ব পালন করার পরও বিদায়ের সময় তাকে কোনো ধরনের পেনশন বা ভাতা প্রদান করা হয় না। যা চরম অমানবিক একটি কাজ।
২০০৮ সালে পরিচালিত ইসলামি ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই রয়েছে ২ হাজার ৭৭৭টি।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে; যা বিশ্ব দরবারে আজ ব্যাপক প্রসংশিত। তবে এ কথাটিও সবাইকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে, এ আড়াই লাখ মসজিদের ইমাম তথা সমাজ প্রতিনিধিদের পেছনে রেখে সুষ্ঠু সুন্দর ও উন্নত বাংলাদেশ গঠন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
সুতরাং আদর্শ সমাজ ও উন্নত দেশ গঠনে ইমামদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।