চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লনের আয়োজনে ‘সাসটেইন্যাবল ক্রপ অ্যান্ড লাইভস্টক ফার্মিং ইন কোস্টাল এরিয়াস অব বাংলাদেশ শীর্ষক দিনব্যাপী এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সরদার সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন, জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে কৃষি ফসল বৈচিত্র্য সর্বত্র বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাবে অনেক ফসলই হারিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতিগতভাবে টিকে থাকতে পারছে না। তাই উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ুগত প্রভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। কৃষিতে পরিবর্তনের এই বাস্তবতা এবং প্রতিকূলতা মেনে নিয়েই সামনে এগোতে হবে। জলবায়ুগত পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন উপকূলীয় এলাকার জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় গবেষণায় বাস্তবতাকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এই অবস্থায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার জন্য তিনি কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহবান জানান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপকূলীয় ফসল এবং অন্যান্য বিষয়ে গবেষণার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক-গবেষকদের অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তিনি প্রকৃতিগতভাবে টিকে আছে এমন সব ফসলের জাত এবং ফসল বহির্ভূত বৃক্ষ, গুল্ম, প্রাণি নিয়েও গবেষণা করে নতুন দিক-নির্দেশনা দেওয়ার আহবান জানান। উপাচার্য ধানসহ উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে কৃষকদের অনুকুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহবান জানান যাতে কৃষক ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে এবং তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণার সম্প্রসারণে জমি ও অবকাঠামো সঙ্কট বড় বাধা বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে এবং এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের জন্য অপরিহার্য ফিল্ড ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণে জমি সংগ্রহে তিনি আশ্বাস দেন। সেমিনারে আলোচিত বিষয়সমূহ বিশেষ করে লবণাক্ত জমিতে ঘাস চাষের মাধ্যমে গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তা টেকসই করতে যে গবেষণার কাজ চালানো হয়েছে সে জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম ও এই গবেষণা কর্মে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রায়হান আলী, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (ফিল্ড ক্রপ) ড. মোঃ হযরত আলী এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সেলের পরিচালক প্রফেসর এ কে ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান। সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রাণি সম্পদ বিভাগসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারের উদ্বোধন পর্বের পর প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ৭টি গবেষণা বিষয়ে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের ৪ জন পিএইচডি গবেষকসহ ৭ জন কৃষিবিদ ও গবেষক তাদের গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে জন্মাতে পারে এবং এই আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে এমন কয়েকটি ঘাসের ওপর গবেষণা চালিয়ে প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম এমন একটি জাত নির্বাচন করেছেন যার উৎপাদন বেশি এবং জমিতে বিদ্যমান সর্বোচ্চ লবণাক্ততা ও বিরূপ আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারবে। পাকচুন জাতীয় ঘাস চাষে উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় পশু খাদ্য সঙ্কট নিরসনে সহায়ক হবে। এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৫০ টন, দেখতে ভুট্টা গাছের মতো মোটা, দীর্ঘ ও নরম। তিনি তার গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই ঘাস চাষে কৃষকদের জন্য বিশেষ উপকারে আসবে এবং তা গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবে। এই গবেষণা প্রকল্পে ১ জন পিএইচডি গবেষক এবং ৬ জন আন্ডার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী কাজ করেছেন বলেও তিনি জানান।