চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃক্যাসিনোকাণ্ড, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিষেধাজ্ঞা জারি করাদের মধ্যে ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ওরফে পাগলা মিজান।
এদের মধ্যে আর রয়েছেন- গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার, এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন, সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের অনেকেই বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিমান্ডে এবং কারাগারে আছেন। এছাড়া জিকে শামীমের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাইও দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গত সোমবার জিকে শামীম ও খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক দল।
গা ঢাকা দিয়েছেন রফিকুল এবং আব্দুল হাই ও তাদের সহযোগিরা
গতকাল রোববার সারা দিন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে রফিকুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্ময়কর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।
তারা বলছেন, রফিকুলের প্রধান সহযোগী ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই। এ ছাড়া কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীও তাদের সঙ্গে ছিলেন। রফিকুল ইসলাম সরাসরি ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করতেন।পাশাপাশি সব নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকেও প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতে হতো রফিককে। ঠিকাদারি কাজ দিতে তিনি আগে থেকেই তিন থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিতেন।
এর বাইরে অন্য প্রকৌশলীরা যে কমিশন পেতেন, তাদের থেকেও তাকে কমিশন দিতে হতো। দায়িত্ব ছাড়ার আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি বদলির রেকর্ডও করে গেছেন রফিকুল ইসলাম। জি কে শামীম গ্রেফতারের পর থেকেই রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল হাই গা ঢাকা দিয়েছেন। ফোনও বন্ধ রয়েছে তাদের।গণপূর্ত অধিদপ্তরের বর্তমান অন্য প্রকৌশলীরাও ভয়ে আছেন। অনেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, অনেকে অপরিচিত নম্বরের ফোন ধরছেন না। এমনকি গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটটিও তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। যাতে কেউ কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর না পান।