ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। গত বছরের মতো এবারও মহামারি করোনা সংকটের মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর আগামীকাল সারাদেশে পালিত হবে মুসলমানদের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তবে এবারও দলে দলে ঈদগাহে না গিয়ে ঘরবন্দি থেকেই পালন করতে হবে উৎসবের আনন্দ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্র এবারেও বন্ধ রাখা হয়েছে, ঈদগাহে হচ্ছে না ঈদের জামাত। জনসমাগম এড়াতে মসজিদগুলোতে যে জামাতের আয়োজন করা হয়েছে, তা ও সীমিত পরিসরে। গত বছরের মতো এবারও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদের দিনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে না।
এবার ঈদের সাজ নেই দেশের কোনো বিনোদনকেন্দ্রে। আয়োজন থাকছে না চিড়িয়াখানায়, বন্ধ শিশুপার্ক। যেখানে একসময় ঈদের দিন সকাল থেকে টানা সাত দিন পর্যন্ত অগুনিত মানুষের ভিড় লেগে থাকতো, সেসব স্থানে এবার ভূতুরে পরিস্থিতি।
এদিকে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ারও উপায় নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেনও। তারপরেও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা উপায়ে বাড়িড় পথে ছুঁটছেন। আর যারা ঘরে থাকছেন তাদেরকে এবারও ঘরবন্দি থেকেই ঈদ উদযাপন করতে হবে।
তবে বাইরে বের হওয়া যাক বা না যাক, তাতে কী! ঈদের নতুন পোশাক তো না কিনে থাকা যাবে না। তাই পোশাক কিনতে সবাই ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে। রাজধানীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে ছোট বড় সকল শপিং মলে ‘তিল ঠাঁই নাহি রে’ অবস্থা।
গত বছরের মতো এবারও ঘরবন্দি ঈদ আনন্দের সঙ্গে নতুন আনন্দ যোগ করবে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান। ঈদ উপলক্ষে দেশের টেলিভিশনগুলো আয়োজন করেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। শর্ট ফিল্ম, নাটক, গান, লাইভ শো, সিনেমাসহ রয়েছে শিশুদের জন্যেও বিভিন্ন আয়োজন। এছাড়াও ইউটিউব, ওটিটি অ্যাপেও থাকছে ঈদের নাটক, টেলিফিল্ম, ওয়েবসিরিজ।
রাজধানীর আর কে মিশন রোডের ফার্স্টলেনের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, এখন সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই একমাত্র কামনা। গত বছর থেকে তো ঈদ আর আনন্দের বিষয় নেই। আল্লাহ জানেন কবে পৃথিবী শান্ত হবে।ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা আলীম হায়দার বলেন, এবার বাড়ি যাইনি। সবাইকে উপহার কিনে পাঠিয়ে দিয়েছি। করোনাকালে জার্নিতে রিস্ক আছে। তাই এবার ঘরেই কাটাবো ঈদ।
টিকাটুলির হাটখোলার বাসিন্দা রোকনুজ্জামান খান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চারা ঘরে থেকে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। গত দুই ঈদ ঘরে কেটেছে। বাচ্চারা বাইরে যাবার জন্য অস্থির। কিন্তু সে উপায় তো নেই। এবারও ঘরে কাটাতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সমস্যা।
২০২০ সালের শুরুতেই থাবা বিস্তার করতে থাকা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মুহুর্তেই মহামারি রূপ নেয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঢল নামে। বছরের শেষ দিকে সংক্রমণের হার কমলেও ২০২১ এর শুরু থেকে আবার বাড়তে শুরু করে। অদৃশ্য এই ভাইরাসে গত এক বছরে মারা গেছে ৩৩ লাখের বেশি মানুষ। বাংলাদেশে এর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ কমাতে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১২ মে) সন্ধ্যায় আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় শুক্রবার (১৪ মে) সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।