অনলাইন ডেস্কঃজিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় বিএনপি অপর আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির উপস্থিত ছিলেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য তুলে ধরেন। খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, আমরা এ বিষয়ে শুনানি করতে চাই।
এ সময় সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াসমিন বীথি বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অংশ নেবেন। তিনি অন্য মামলায় ব্যস্ত আছেন। তাই দুপুরের পর শুনানি রাখা হোক।
এ সময় আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার বলেছে খালেদা জিয়ার মামলায় তারা হস্তক্ষেপ করবে না। জামিন হলে কোনো অসুবিধা নেই। তা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল থাকতে হবে কেন?
জবাবে আদালত বলেন, এসব তো রাস্তার কথা, রাজনীতির কথা। তারা তো আদালতে এসে এমনটি বলেননি। অ্যাটর্নি জেনারেল আসুক, এর পর শুনানি হবে।
এর পর আদালত দুপুর ২টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে আবার শুনানি শুরু হয়। শুনানির সময় প্রথমে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মাই লর্ড, আমরা শর্ট সাবমিশন রাখব। খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে গুরুতর অসুস্থ। এ মামলায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে মামলায় আসামি করে সাজা দেওয়া হয়। আমরা সাজার বিরুদ্ধে যাব না। শুধু জামিনের বিষয়ে কথা বলব।
এ সময় আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মামলার অভিযোগ গঠন ও এজাহার উপস্থাপন করেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার বাদী এজাহারে আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করেননি। তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন এ ধরনের কোনো কথাও বলেননি। কিন্তু এ মামলার তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগ গঠনের সময় খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত তা গ্রহণ করে দুদক আইনের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দিলেন। কী চার্জ হলো, কী সাক্ষ্য হলো, আর কী জাজমেন্ট হলো? যেখানে বাদী নিজে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া টাকা আত্মসাৎ করেননি।
এ সময় আদালত বলেন, আপনারা চার্জ গঠন ও সাক্ষ্য বিষয়ে আসেননি কেন?
জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ছিল রেজিস্ট্রিকৃত ট্রাস্ট। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। ট্রাস্টের টাকা ট্রাস্টে আছে। ডা. ফারজানা নামে একজন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক মামলা করল। অথচ তাকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়নি। এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে। পার্টির লোকজন এখানে টাকা জমা দিয়ে থাকে। আমরা এসব আপিল শুনানিকালে বলব। তবে কয়েকটি যুক্তিতে জামিন চাই।
তা হলো- খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে প্রায় অচল হয়ে গেছেন। তার ডায়াবেটিস ১৬ থেকে কমে আসছে না। বেশিরভাগ সময় ২২ থেকে ২৭ পর্যন্ত থাকে। এ ছাড়া মামলার বাদী এবং প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনোরূপ টাকা আত্মসাৎ করেননি। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারও করেননি। এর আগে সাত বছর সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামিকে আপনারা জামিন দিয়েছেন। এ ধরনের কয়েকটি মামলার রেফারেন্স দিলাম। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তাররা চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তারা বলছেন, এখানে খালেদা জিয়ার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সম্ভব নয়। আমরা খুবই বিনয়ের সঙ্গে বলছি, তাকে যেন জামিন দেয়া হয়।
এ সময় জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, বিজ্ঞ আদালত সরকারও মিডিয়ার সামনে অনেকবার বলেছে, খালেদা জিয়াকে জামিন দিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা আদালতে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
এ সময় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের মধ্যে সবাই হেসে ওঠেন। এরপর বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর দুইটা পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি করা হয়। আজ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে।