অনলাইন ডেস্কঃ প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি, খুলনা’র সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে ওজোপাডিকোতে গ্রাহকদের টাকায় চলছে হরিলুট। ওজোপাডিকোর দুর্নীতির যাতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারন গ্রাহকরা। যা দেখার বা শোনার কেউ নেই। দুর্নীতিতে জর্জরিত এ অঞ্চলের নাগরিকদের পক্ষে দাড়ানোর প্রয়োজনে ‘ওজোপাডিকোর প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ঘোষণা করা হয়েছে নানা কর্মসূচি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মানব বন্ধন, ১৯ জুন বুধবার খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ, ২০ জুন বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ এবং ২০ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত কেসিসি মেয়র ও সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওজোপাডিকোর প্রি পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিটি গঠন।
শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর বিএমএ’র কাজী আজাহারুল হক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ও বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার প্রধান যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বারবার ঘোষনার কথা উচ্চারন করছেন ঠিক তখনই ২১জেলা নিয়ে গঠিত ওজোপাডিকো গ্রাহকদের জোর করে প্রি-পেইড মিটার চাপিয়ে দিয়ে নানা দুর্নীতির মাধ্যমে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে চলেছে। ওজোপাডিকো এতটাই বেপরোয়া যে, নাগরিকদের কোন কথায় তারা কর্নপাত করছে না। এই ওজোপাডিকোর কারনে সরকার ও সরকার প্রধানের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে খুলনায় প্রি-পেইড মিটার বসানো শুরু হলে আগের ডিজিটাল মিটার অকেজ হয়ে পড়ে, অথচ আগের ডিজিটাল মিটার ক্রয় করতে গ্রহকদের এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ বহন করতে হয়েছে। গ্রাহকদের বিপুল অংকের টাকা অপচয় করার অধিকার কারও নেই, এর দায় ওজোপাডিকো গ্রহন করে গ্রহকদের ডিজিটাল মিটারের টাকা পরিশোধ করতে তারা বাধ্য। এরই সাথে বর্তমান প্রি পেইড মিটারে রয়েছে অনেক অস্বচ্ছতা, যা নাগরিকদের মনে দুর্নীতির সন্দেহ সৃষ্টি করছে।
ওজোপাডিকোর বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনা মূল্যে প্রি পেইড মিটার দেয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে সিঙ্গেল ফেজ মিটারে ৪০ টাকা ও থ্রি ফেজ মিটারের জন্য ২৫০ টাকা প্রতি মাসে কেটে নিচ্ছে ওজোপাডিকো।
এছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী বিদুৎ ব্যবহারের পূর্বে বিল পরিশোধ করার কারনে গ্রাহকরা ১% রিবেট পাবেন। গত ২০১৬ সাল থেকে প্রি পেইড মিটার চালু থাকলেও এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত গ্রাহকদের কোন প্রকার রিবেট দেয়া হয়নি। গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক পূর্বাঞ্চলে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার হওয়ায় ৩০ এপ্রিল থেকে ১% রিবেট দিতে শুরু করেছে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিগত সময়ে গ্রাহকদের বিপুল অংকের রিবেট আত্মসাৎ করা টাকা ফেরৎ দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
আবার প্রি পেইড মিটার রিচার্জ করার সাথে সাথে রিচার্জ এর টাকা ও বিভিন্ন খাতে কেটে নেয়া টাকার মধ্যেও ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। ওজোপাডিকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতটাই বেপরোয়া যে, গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা চাইলে তারা উত্তেজিত হন এবং অনিহা প্রকাশ করেন। গ্রহকরা সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, ওজোপাডিকোর ব্যবহৃত সফটওয়্যার এমনভাবে তৈরি যা গ্রাহকের রিচার্জের টাকা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্থ।
মিটার লাগানোর সাথে সাথে প্রথম রিচার্জে সঠিক বিল আসলেও পরবর্তী মাস থেকে শুরু হয় অধিক বিলের ভোগান্তি, এই সকলই সফটওয়্যার কারসাজি বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। এছাড়া প্রত্যেক গ্রাহকের বিল থেকে ভ্যাট কেটে নেয়া হচ্ছে ৫%। কিন্তু গ্রাহকদের কোন কর চালন পত্র দেয়া হয় না। যেখন ভ্যাট চালন পত্র সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে জমা দিতে হয় সেখানে এভাবে ভ্যাট কেটে নেয়ার কোন বিধান নাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রি পেইড মিটারে গ্রাহকদের প্রতি সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরন হল মিটার লকিং ও লক ওপেনিং পদ্ধতি। নতুন ধরনের পদ্ধতিতে কোন ধরনের ট্রেনিং ছাড়া প্রি পেইড মিটার অপারেট করতে গিয়ে গ্রাহকদের মিটার অনিচ্ছাকৃতভাবে লক হয়ে যাচ্ছে। যা খুলতে বন্ধ ব্যতিত কর্মদিবসে ওজোপাডিকোর দারস্থ হতে হয় এবং সাথে দিতে হয় অর্থ দন্ডিও।
এভাবে মিটার বাইপাস করে গ্রাহক হয়রানি, নো ট্রেস বিল আদায়, বিএসটিআই’র সনদবিহীন প্রি পেইড মিটার ইত্যাদি ওজোপাডিকোর নানা হয়রানির অভিযোগ এনে উপরোক্ত কর্মসূচির সাথে খুলনার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়।-খবর বিজ্ঞপ্তি