চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনা রোগীদের চিকিৎসা এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বসবাস ও কোয়ারেন্টাইনের জন্য খুলনায় পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের কোটি টাকা বিল পরিশোধ নিয়ে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসবাস ও কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হোটেলসহ চারটি প্রতিষ্ঠান।
প্রথম দিকে এসব প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বা বিল পরিশোধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও এখন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় কোটি টাকা বিল দাবি করছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানি শুরু হয়েছে। বিল না পেয়ে ইতোমধ্যে একটি আবাসিক হোটেল থেকে চিকিৎসকদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ওই সভায় হোটেল মিলেনিয়াম ও সিএসএস আভা সেন্টারকে চিকিৎসকদের আবাসনের জন্য নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। গত ৪ এপ্রিল থেকে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে করোনা চিকিৎসার জন্য খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালকে ব্যবহার করা হয়। শনিবার পর্যন্ত সেখানে ৫৮ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি একটি সমিতির মাধ্যমে চলা এই হাসপাতাল ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষ দৈনিক ৫৬ হাজার টাকা দাবি করে একটি চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই চিঠিতে ৬৪ দিন ব্যবহারের জন্য তারা ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা দাবি করেছে।
নগরীর সিএসএস আভা সেন্টারে অবস্থান করেন করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ৪ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন ৪৯ হাজার ১৮৮ টাকা করে ৬৪ দিনে ৩১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২ টাকা বিল দাবি করেছে তারা।
একইভাবে সিভিল সার্জন অফিসের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক হোটেল রয়্যালের ৭ম তলায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এ হোটেল ভাড়া বাবদ ৩০ মে পর্যন্ত তারা ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৫ টাকা বিল দাবি করেছেন।
এছাড়া, ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন হোটেল মিলেনিয়ামে। তারা বিল দাবি করেছে ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বিল পরিশোধ না করায় ইতোমধ্যেই এ হোটেলে থাকা চিকিৎসকদের নামিয়ে দিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি রেজা সেকেন্দার বলেন, ‘সরকারি প্রয়োজনে এসব হোটেল নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব হোটেল মালিক কোটি টাকা বিল দাবি করেছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। এখন খুমেক হাসপাতালের নবনির্মিত একটি ভবনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘জনস্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠান রিকুইজিশন করা হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের মানবিক হওয়া উচিত ছিল। তবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি এর একটি সুষ্ঠু সমাধান করবে।’
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়েছে। তারা এসব প্রতিষ্ঠানের বিল যাচাই-বাছাই করবেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’