ইংরেজি মাধ্যমগুলো স্কুলগুলোর বেতন সবসময়ই আকাশ ছোঁয়া। পুঁজিবাদী সমাজ। যার অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তারা এর সুযোগ গ্রহণ করবেন, খুব স্বাভাবিক। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে পুরো বিশ্ব যেভাবে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে, সেখানে এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো এখনও চরম ব্যবসা করবে- সেটিও চরম অনৈতিক। মাস্টারমাইন্ড স্কুল শুনলাম মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে তাদের শিক্ষার্থীদের বেতন অর্ধেক করেছে। সেখানে স্কলাসটিকা স্কুল আমাদের সন্তানদের কাছে পুরো বেতনতো বটেই, উল্টো আরো ৭৫ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত চেয়েছে অনলাইনে জুলাই থেকে ক্লাস শুরু করার জন্য।
ইয়াসমিন মোর্শেদ যখন স্কলাসটিকার প্রিন্সিপাল ছিলেন, তখন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্কুলের মধ্যে সম্পর্কটা পারষ্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়েই ছিল। বেতন বাড়ানোর সময় প্রতিবার অভিভাবকদের ডাকা হতো। যদিও দিনশেষে বটগাছটা তাদেরই হতো, কিন্তু বলার একটা জায়গা ছিল। তারপর, প্রিন্সিপালের পর প্রিন্সিপাল বদল হয়েছে, মালিকানা বদল হয়েছে। স্কুল এখন হয়ে গেছে শুধুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই খাত, সেই খাত দেখিয়ে কি পরিমান অর্থ যে তারা আদায় করে চিন্তারও বাইরে। তারপরও পুঁজিবাদী সমাজের দোহাই দিয়ে সব মানতে বাধ্য হতাম। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে অন্যান্য স্কুল যেখানে অর্ধেক বেতন নিচ্ছে, সেখানে স্কলাসটিকা স্কুল উল্টো শিক্ষার্থীদের উপরে আরো অতিরিক্ত টাকার দাবি চাপাচ্ছে। আমরা বাবা মায়েরা শুধু সন্তানদের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানোর স্বপ্নে সব অন্যায় দাবি মাথা পেতে মেনে নেই। কিন্তু মেনে নেয়ারও বোধহয় একটা শেষ সীমা আছে।
দুঃখের মধ্যেও একটা মজার বিষয় হলো, গতকাল পর্যন্ত স্কলাসটিকা স্কুল জানিয়েছিল, এই দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পিটিশন যদি ১০০০ হয়, তবে তারা চিন্তা করবেন কি করা যায়। আজ যখন শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছ থেকে ১০০০ পিটিশন এলো, সাথে সাথে তারা জানিয়ে দিলেন পিটিশন ২০০০ হলে তারা নাকি ভেবে দেখবেন! সময়ের সাথে সাথে তারা বোধহয় তাদের সংখ্যা বাড়াতেই থাকবেন। যাতে তাদের দাবির নাগাল আমরা কখনোই না পাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে আমরা উল্টো শিক্ষার্থীদের সাহায্য করছি, পাশে থাকছি, সেখানে ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুলগুলো এখনও শুধুই ব্যবসা আর মুনাফাকেই দেখে যাচ্ছে। আমার সন্তানরাও স্কলাসটিকা স্কুলে পড়ে, কিন্তু বিরক্ত আর বাধ্য হয়েই আজ লিখলাম…।